আওয়ামী লীগ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও একই দাবি করে জানান, ওই সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে তথ্য রয়েছে।
তবে আগরতলায় সমাবেশ, প্রবাসী সরকার গঠন ও শেখ হাসিনার উপস্থিতির যে তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে ভারত সরকারও বলছে, এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কেউ এখনও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
কী বলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ
আগরতলায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণার এমন তথ্য তারা কোথায় পেলেন, ‘জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমাদের নিজস্ব কানেকশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।’
সমাবেশ করার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগ নেতারা এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন বলেও দাবি করেন এই সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ‘শনিবার তারা কুমিল্লার কাছে সীমান্তের এক জায়গাতে মিটিংও করার চেষ্টা করেছিলেন, জানাজানি হওয়ার কারণে যা পরে আর সফল হয়নি।’
তবে ভারতে সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এগুলো সব ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা।’
অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
এমন দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক সিনিয়র নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অরাজকতা চলছে। মোট কথা, কোনোকিছুর ওপর তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) নিয়ন্ত্রণ নেই।’
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা এখন এসব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিন্তু এসব করে পার পাওয়া যাবে না। ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই অন্তর্বর্তী অবৈধ সরকারকে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালানো হচ্ছে, তাতে করে জীবন বাঁচাতে কেউ যদি দেশের বাইরে আশ্রয় নেয়, সেটা কি সে পারে না?’
ভারত কী বলছে
ভারত সরকারের কর্মকর্তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবিকে সম্পূর্ণ ‘গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ভারত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ভারত সরকারের একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানায়, ‘কারা বলছেন এসব কথা? তারা কি কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন? পাশের দেশে যে কেউ একটা আজগুবি কথা বললেই আমরা কেন জবাব দিতে যাবো?’
এ ধরনের দাবির যে কোনো ভিত্তি নেই, সেটা অবশ্য ত্রিপুরা এবং দিল্লিতে নানা মহলে খোঁজখবর নিয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ, প্রথমত আওয়ামী লীগের পালিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা যদি ত্রিপুরার মাটিতে বড় মাপের কোনো সমাবেশ করতে চান, সেটা একেবারে গোপনে বা স্থানীয়দের কাউকে টের পেতে না দিয়ে করা সম্ভব নয়।
ত্রিপুরার সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, রাজধানী আগরতলায় এ ধরনের কোনো তৎপরতা গত কয়েক সপ্তাহে তাদের আদৌ চোখে পড়েনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানের মুখে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তারপর থেকেই তিনি দেশটিতে অবস্থান করছেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে শেখ হাসিনা ভারতে কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।