গাজা ফেরত ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে ট্রমা, বাড়ছে আত্মহত্যার হার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

এলিরান মিজরাহি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য, ৪ সন্তানের বাবা ছিলেন তিনি। গত বছর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্থল অভিযানে তাকে গাজায় পাঠানো হয়। গাজায় যুদ্ধ চললেও আহত হওয়ায় সেখান থেকে ইসরায়েলে ফেরত আনা হয় তাকে। কিন্তু তত দিনে একজন ভিন্ন মানুষে পরিণত হয়ে যান তিনি।

গাজায় যুদ্ধ করতে গিয়ে যুদ্ধের বিধ্বংসী চিত্র দেখে মানসিকভাবে বড় আঘাত পান এলিরান। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পর চরম অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। যার ফলাফল হয় ভয়াবহ। পুনরায় গাজায় পাঠানোর আগে আত্মহত্যা করেন তিনি।

এলিরানের মা জেনি মিজরাহি বলেন, ‘সে গাজা ছেড়েছিল, তবে গাজা তাকে ছাড়েনি। সেই অবসাদেই আমার ছেলে মারা গেল। ’

এলিরান যে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তার নাম ‘পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ (পিটিএসডি)। গাজা থেকে ফেরার পর ইসরায়েলের হাজার হাজার সেনা পিটিএসডিসহ নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

তবে তাদের কতজন আত্মহত্যা করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গত আগস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতি মাসে এক হাজারের বেশি আহত সেনাসদস্যকে চিকিৎসার জন্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের ৩৫ শতাংশ নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তবে এই সেনাদের ২৭ শতাংশের অবস্থা উন্নতির দিকে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১৪ হাজার ইসরায়েলি সেনাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হবেন।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় বিধ্বংসী তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েল। সময়ের সাথে সাথে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে বেড়েছে লাশের সংখ্যা। সেখানে এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৪২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় মাটিতে মিশে গেছে পুরো গাজা, ধ্বংস হয়েছে পুরো উপত্যকা। এরই মধ্যে আবার লেবাননে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

গাজায় চার মাস ছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন চিকিৎসক। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি সিএনএনকে বলেন, গাজার পর এখন অনেক সেনাকে লেবাননে পাঠানো হতে পারে এই আতঙ্কে রয়েছেন তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর বহু সেনাসদস্য এখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারকে বিশ্বাস করেন না।

এদিকে গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের ইসরায়েল সরকার প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যারা যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন তারাও সেনাদের নজরদারিতে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে ইসরায়েলের হামলায় গাজার ফিলিস্তিনিদের কতটা দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বা সেখানে ইসরায়েলি সেনারা কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছেন, সে চিত্রটা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন