দ্রুত নির্বাচিত সরকার না এলে কী কী ঘটবে সেই আশঙ্কার কথা তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করতে হলে সেই নির্বাচিতদেরকে নিয়েই করতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সপ্তম ও নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এ কর্মসূচি আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।
বিএনপি নেতা নজরুল বলেন, এমনভাবে সেই গণতন্ত্র ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করা, যাতে করে সেই গণতন্ত্র কেউ জনগণের বিপক্ষে কাজে না লাগাতে পারে। প্রকৃত গণতন্ত্র, জনগণের গণতন্ত্র, সে রকম একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে যে সংস্কার যেখানে করা দরকার, যত দ্রুত সেটা করে বাংলাদেশে জনগণের নির্বাচিত শাসন, নির্বাচিত সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের দাবি।
নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম বলেন, এটা যত দেরি হবে তত নতুন নতুন সংগঠন গজাবে, নতুন নতুন ব্যক্তি আসবে… তারা নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসবে, নতুন নতুন আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করার চেষ্টা করবে এবং বোঝানোর চেষ্টা হবে যে, এটাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা। এটা সঠিক হবে না।
নির্বাচিত ছাড়া কারও পক্ষে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কথা বলার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলও যদি বলে যে, ‘এটাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা’, তাহলেও সেটা হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা জনগণ অনুমোদন করে। যেখানে সবচেয়ে বড় দল বললে হবে না, সেখানে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বললে হয়ে যাবে এমনটাও হবে না। দেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের সম্মতিতে তাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে গণতান্ত্রিক সরকারকে। আর সেটা করার জন্য যে বিধানগুলো দরকার সেই বিধান সন্নিবেশিত করে আমাদের সংবিধান সংশোধিত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
‘এরা অদ্ভুত সরকার’ এই মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘অদ্ভুত কেন বললাম? এই সরকার এখন নিজেই বুঝতে পারছে না তারা কি বিপ্লবী সরকার নাকি সাংবিধানিক সরকার।
“আবার কেউ কেউ বলছেন ‘বিপ্লব যে অসম্পূর্ণ ছিল, সেই ‘অসম্পূর্ণ’ বিপ্লব এবারে আমরা সম্পূর্ণ করব’। এ জন্য আবার দফা-দফা পেশ করেছেন। সেই দফার মধ্যে সমাজে গুণগত পরিবর্তন করার মত এমন কিছু নাই।
“বিপ্লব, যেটা মানুষের জীবনকে বদলে দেয়, দেশের চরিত্র বদলে দেয়, যেটা দেশকে গুণগতভাবে আরও বেশি উন্নত করে, এখন পর্যন্ত এ রকম হয়নি।”
মান্না বলেন, “কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষের জীবন সহজ হয়নি, সুন্দর হয়নি, মানুষের জীবন গণতান্ত্রিক হয়নি, রাষ্ট্রটা গণতান্ত্রিক হয়নি, দেশে নির্বাচন চালু হয়নি।
“এই কাজগুলো যদি ঠিকমত করতে পারেন, এমন একটা দেশ গড়তে পারেন যে দেশকে আমরা বলতে পারি গত ১৫ বছরের তুলনায় কিংবা গত ৫৪ বছরের তুলনায় ভালো, এমন একটা দেশ যেখানে জীবন-যাপন করা ভালো-সহজ, মনে হয় এটা আমার দেশ, মানুষ মানুষকে সম্মান করে, আমি আমার ইচ্ছামত ভোট দিতে পারি, আমার ভোট অনুযায়ী সরকার গঠিত হয়, জনগণের প্রতিনিধি আমাদেরকে শাসন করে… ।
“এত কাজ সম্পন্ন করবার ক্ষেত্রে সরকার চেষ্টা করছে না তা বলছি না। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন ছোট খাট বিষয় নিয়ে অহেতুক একটা বির্তক সৃষ্টি করছে, এমন জটিলতার মধ্যে চলে যাচ্ছেন তখন মনে হয় তারা পারবেন তো? এজন্যই আমরা বলি, আমরা এই সরকারের সাফল্য চাই… এই সরকারের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।”
আয়োজন সংগঠনের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমও বক্তব্য রাখেন।