গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী এবং মত ও পথ অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
মোকতাদির চৌধুরী কোটার যৌক্তিক সমাধান প্রত্যাশা করে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে গত ১৩ জুলাই শিবচরে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ২০১১ সালে উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার এবং ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সংসদ সদস্য পদ হারান।
তিনি নবম জাতীয় সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন।
১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত-সহকারী সচিব এবং ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্তসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে জিএস পদে নির্বাচিত হন। তিনি স্বৈরশাসক ইয়াহিয়ার আমলে ১৯৭০ সালে ৬ মাস কারাবাস করেন।
তিনি ১৯৭০-১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তার একটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন।
১৯৭৫ সনে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তিনি দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্রআন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। যারফলে ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে গ্রেফতার হন এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি লাভ করেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে দুইবার সদস্য মনোনীত হন। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।