এবারের মার্কিন নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৪ কোটি হলেও ফলাফল নির্ধারণ করে দিবেন খুব কম সংখ্যক ভোটার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য নামে পরিচিত ৭টি রাজ্যের ভোটারদের হাতেই নির্ধারিত হতে পারে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নয়, মার্কিন নির্বাচন হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটর (নির্বাচক) থাকেন।
৫০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য থেকে সর্বমোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচন করেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে।
মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে ‘উইনার টেকস অল’ নিয়মে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, একটি রাজ্যে যেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তার ভাগেই যাবে সেই রাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোট। নির্বাচনে জিততে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অন্তত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়।
এই পদ্ধতিতে দেখা যায় বেশিরভাগ রাজ্যের ফলাফল প্রতি নির্বাচনে প্রায় একই থাকে। তবে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এই ফলাফল বারবার বদলায় যে রাজ্যগুলোকে সুইং স্টেট (দোদুল্যমান রাজ্য) বলে। এইসব রাজ্যের ভোটেই নির্ধারিত হয় ফলাফল। এই সাত রাজ্য হলো— অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, উত্তর ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন।
অ্যারিজোনা
মেক্সিকো সীমান্তবর্তী এই রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ১১টি। মোট ভোটার ৭৪ লাখ। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল অ্যারিজোনার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বাইডেন।
এবার ট্রাম্পের আশা মেক্সিকো সীমান্তের এই অঙ্গরাজ্যে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে মানুষের মনে যে হতাশা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে ভোটের দিক দিয়ে সমর্থন বাড়বে তার।
এবার কট্টর অভিবাসন বিরোধী প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
জর্জিয়া
১৬টি ইলেকট্ররাল কলেজ ভোটের এই রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে গত নির্বাচনে। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রথম কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে এই রাজ্যে জয় পান জো বাইডেন। আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যুষিত এই রাজ্যে এবারও সুবিধা পেতে পারেন কমলা হ্যারিস। সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীকে মাথায় রেখে জোর প্রচারণাও চালিয়েছেন কমলা।
মিশিগান
১ কোটি ভোটারের রাজ্য মিশিগানে ইলেকট্ররাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ১৫টি। গত দুই নির্বাচনে যারা এই রাজ্যে জিতেছে তারাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। গত নির্বাচনে এখানে বাইডেন জিতলেও এবার গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা এবং বাইডেনের সমর্থনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে রাজ্যের ভোটাররা।
যুক্তরাষ্ট্রের আরব আমেরিকান জনগোষ্ঠীর সিংহভাগের বসবাস এই অঙ্গরাজ্যে। ফলে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতি বাইডেনের একনিষ্ঠ সমর্থন ডেমোক্র্যাটদের বিপাকে ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
নেভাডা
নেভাডায় মোট ভোটার ৩২ লাখ এবং ইলেকট্ররাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ৬টি। গত নির্বাচনে ৩৪ হাজার ভোটে বাইডেনের জয় হলেও এবার সে ফলাফল উল্টে যাওয়ার আভাস দেখা যাচ্ছে। প্রাথমিক জরিপে ট্রাম্প অনেক এগিয়ে থাকলেও কমলা প্রার্থী হওয়ার পর থেকে সেই দূরত্ব কিছুটা কমেছে। দুই প্রার্থীই রাজ্যের হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর ভোটার টানার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে কর কমানো এবং আইন শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উত্তর ক্যারোলিনা
১৯৮০ সালের পর মাত্র একবার কোনো ডেমোক্রেটিক প্রার্থী এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন। তবে অভিবাসী ও সংখ্যালঘু ভোট বাড়ায় এবার এখানে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কমলা।
এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির গভর্নর প্রার্থী একটি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় দলের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এ কারণে সেখানে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যেতে পারেন ট্রাম্প।
এক কোটির বেশি জনসংখ্যা এবং ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ভোটের এই রাজ্যকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। হত্যা চেষ্টার পর এই রাজ্যেই ফের র্যালি করেন ট্রাম্প।
পেনসিলভানিয়া
১৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের এই রাজ্যকে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। দুই প্রার্থীই ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন এখানে। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁদের একমাত্র বিতর্কটি সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত জুলাই মাসে পেনসিলভানিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বন্দুকের গুলির লক্ষ্য হন ট্রাম্প। তিনি এ রাজ্যে গ্রামাঞ্চলের শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে কাছে টানতে চেষ্টা করছেন।
একসময় পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটদের জন্য অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য অঙ্গরাজ্য থাকলেও ইদানীং এর চেয়ে হাড্ডাহাড্ডি পরিস্থিতি আর কোথাও নেই। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গরাজ্যটিতে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্টে জয়ী হন। সেখানে ২০২০ সালে ১ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্টে জয়ী হন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন।
উইসকনসিন
২০১৬ নির্বাচনে ট্রাম্প ও ২০২০ নির্বাচনে বাইডেন জয় পেয়েছিলেন এই রাজ্যে। এখানে জয়ের জন্য মরিয়া রিপাবলিকান শিবির তাদের জাতীয় কনভেনশন করেছে উইসকনসিনে। নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিকে সকল সমীক্ষায় বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু কমলা প্রার্থিতা পাওয়ার পর দুজনের মধ্যে ব্যবধান সবসময় গ্রহণযোগ্য ভুলের মাত্রার (মার্জিন অব এরর) মধ্যে ছিল। যার মানে, কোনো প্রার্থীই এগিয়ে নেই এই রাজ্যে।