৫ আগস্টের পর থেকেই ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট হাসপাতালটিতে অস্থিরতা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ৬ আগস্ট জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন কক্ষ ভাংচুর এবং ল্যাপটপসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার আগেই কমিটির প্রধান তৎকালীন উপপরিচালককে বদলি করা হয়। পরে পদায়িত উপপরিচালক গত ১ সেপ্টেম্বর ওএসডি হন। ১২ সেপ্টেম্বর আগের পরিচালককে সরিয়ে নতুন পরিচালক পদায়ন করা হয়। গত ২৩ অক্টোবর তিনি অবসরে যান।
এর মধ্যে হাসপাতালের চারজন চিকিৎসককে আগের সরকারের আমলের সুবিধাভোগী দাবি করে তাদের বদলির দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তারা। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজনের ভাষ্য, ওএসডি হওয়া ইন্সটিটিউটের একজন কর্মকর্তা নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিচালকের অনুপস্থিতিতে কয়েকজন শিক্ষক ও অধ্যাপককে নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ইন্সটিটিউটের প্রশাসনিক, শিক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ইন্সটিটিউটে মূল ফটকের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে একদল চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। প্ল্যাকার্ডে লেখা—‘ওএসডি হয়েও অফিসে কেন? ভুয়া সমন্বয়ক মানি না, নব্য স্বৈরাচার নিপাত যাক’।
দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান ও মানববন্ধন হয়। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের (বিএপি) আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন এবং যুগ্ম সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ডা. রাহেনুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই উপপরিচালক হলেন ডা. মোহাম্মদ সফিকুল কবির। গত ১ সেপ্টেম্বর তাকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিনি নিয়মিত ইন্সটিটিউটেই অফিস করছেন।
ইন্সটিটিউটের হাজিরা তথ্যে দেখা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনি মোট ৩৫ দিন অফিস করেছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করেছেন বেশ কয়েক দিন। বাকি দিনগুলোতে তিনি দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অফিস করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে ডা. মোহাম্মদ সফিকুল কবিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে সমন্বয়কের কথা বলে একজনের হাতে ফোন ধরিয়ে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি বলেন, ইন্সটিটিউটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তারা কাজ করছেন।
ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হওয়ার পর অফিস করা যায় কি না—এমন প্রশ্নে ডা. মোহাম্মদ সফিকুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর ওএসডির বিষয়ে জানতে চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি।’ এরপর কোনো কথা না বলে লাইন কেটে দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী একাধিক চিকিৎসক জানান, ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. অভ্র দাশ ভৌমিক ছুটিতে দেশের বাইরে গেলে উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ সফিকুল কবিরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে যান। এর পরপরই তিনি রুটিন দায়িত্বের বাইরে ৯ জন শিক্ষক, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপককে নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য চিঠি দেন। অন্যথায় অনভিপ্রেত ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকি দেন।
এদিকে বিষয়টি জানিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেন সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. অভ্র দাশ ভৌমিক।
সূত্র: কালের কন্ঠ