বাঙালির মুক্তির দর্শনে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একজন আপোসহীন অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনের মানুষ। তাঁর অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনে দীক্ষিত হওয়ার পেছনে ধর্ম সচেতনতা ও ধর্ম পাঠ প্রধান ভূমিকা রেখেছে । তিনি স্পষ্টতই ধর্ম ও ধর্মতন্ত্র যে এক নয়, সে সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেছিলেন ছাত্র জীবনেই। আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া তরুণ ছাত্র উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মানবিক চেতনার ভিত্তিই রচিত হয়েছিল ধর্ম পাঠের মধ্য দিয়ে। এজন্যই তিনি ধর্ম ও ধর্মতন্ত্রকে আলাদা করতে পেরেছিলেন, ফলে অসাম্প্রদায়িক চিন্তায় নিজেকে নিমগ্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
যার ফলে তাঁর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও হয়েছিল অসাম্প্রদায়িকতায় মহীয়ান। পাকিস্তান আমলের তথাকথিত ইসলামী ভাবধারার কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি তিনি। বরং নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উর্ধ্বে। এর ফলেই তিনি আজ বাংলাদেশ উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে লড়াকু এই মানুষকে নিয়ে চারদিকে নানামুখী অপতৎপরতা শুরু করেছে জামায়াত, হেফাজতসহ বিতর্কিত ইউনুস সরকার ও তার প্রশাসন। অলীক মামলায় জড়িয়ে তাকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে শুধু হয়রানিই করা হচ্ছে না বরং তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। যুদ্ধাহত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যেন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে পাকিস্তানপন্থী রাজাকার ও তাদের প্রজন্ম।
রিসেট বাটন চেপে একের পর এক ইতিহাস মুছে দিতে শুরু করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতায় আওয়ামী লীগের অবদানের ইতিহাস সরিয়ে ফেলছে তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে রাজাকারদের খুশি করছে এই সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকেও রিমান্ডে নিয়েছে মৌলবাদমদদপুষ্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিবিরীয় পুলিশ প্রশাসন। যা অত্যন্ত আপত্তিকর এবং নিন্দনীয়। কোনো ভাবেই একজন মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রীকে এভাবে রিমান্ডে নেওয়া কোনো সভ্য দেশ ও জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই অসভ্যতার নিন্দা জানাই আমরা।
লেখক: কবি ও সমাজ চিন্তক