নওগাঁয় বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলম খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিনের বিরুদ্ধে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতে এ দুই নেতার কথোপকথনের ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
এর আগে উপজেলার গোবরচাঁপা বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম খানসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন। এ মামলায় আরও ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনটিতে সামছুল আলম খানকে কল দিয়ে প্রথমেই নিজেকে ‘চ্যাংলা সৌখিন’ হিসেবে পরিচয় দেন বেলাল হোসেন সৌখিন।
এরপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে সামছুল আলম খানকে সৌখিন বলেন, ‘আপনি মাইনকাকে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। সে কি আপনাকে বাঁচাতে পারবে?’
জবাবে সামছুল আলম বলেন, ‘এসব গুজব। কাওকেই ২ লাখ টাকা দেইনি। আর বাঁচা মরা তো আল্লাহর হাতে। আল্লাহ যা ভাগ্যে রেখেছেন, তাই হবে।’
এ কথা শোনা মাত্রই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সৌখিন। সামছুল আলম খানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর হাতে ঠিক আছে। কিন্তু আপনার মৃত্যু আল্লাহ আমার হাতে লেখে রেখেছে। তাহলে সেটার কি হবে?’
এ কথা শোনা মাত্রই হালকা হেসে উঠেন শামসুল আলম। আবারো ২ লাখ টাকা কাওকে দেওয়ার বিষয়টি গুজব বলে জানান তিনি।
প্রতি উত্তরে কল করা ওই নম্বরে বিকাশ ও নগদ একাউন্ট খোলা আছে জানিয়ে সৌখিন বলেন, ‘মাইনকা দলের কেউ না। ওকে ২ লাখ দিয়েছেন। বেঁচে থাকতে চাইলে আমাকেও ১ লাখ দেবেন।’
ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিনের মোবাইলে কল করলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ফেসবুকে যে অডিও ছড়িয়েছে, সেটি আমার না। ৫ আগস্টের পর শামসুল আলমের সঙ্গে কখনোই আমার কথা হয়নি। ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় বাদী হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত।
ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডে বিএনপি নেতা সৌখিনকে বার বার ‘মাইনকা’ বলতে শোনা যায়। এখানে ‘মাইনকা’ বলতে বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গদেব চৌধুরী মানিককে বুঝিয়েছেন বেলাল হোসেন সৌখিন। স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আওরঙ্গদেব চৌধুরী মানিকের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ড সৌখিনের এটা স্পষ্ট। এখানে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এদের কাজই চাঁদাবাজি করে বেড়ানো। সৌখিন বিস্ফোরক আইনে যে মামলা করেছে সেটি পরিষ্কারভাবে চাঁদা আদায়েরই রশিদ। পুরো উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা জানেন কীভাবে তারা নোংরামি করে বেড়াচ্ছে। ২ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার আমার বিরুদ্ধে যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকির হোসেন চৌধুরীর আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন সৌখিন। ৫ আগস্টের পর তিন মাসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার এজাহার লিখেও নাটকীয়তা করে যাচ্ছিলেন সৌখিন। মামলায় নাম বাদ দেওয়ায় হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে গেছেন তিনি। কল রেকর্ডটি বিস্ফোরক আইনে মামলা করার আগের দিনের হয়ে থাকতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুলের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, সৌখিনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। কল রেকর্ডটির সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।