কোনো প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা মামলা ছাড়াই কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরের চান্দিনা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে অধ্যক্ষ মামুন পারভেজকে তার কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে কলেজে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চান্দিনা উপজেলা গেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা।
অধ্যক্ষের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রীরা। এতে মহাসড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্ট হয়। পরে তারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
চান্দিনা মহিলা কলেজের ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, কোনো প্রকার মামলা ছাড়াই কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ ভূইয়াকে চান্দিনার বাসা থেকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। বুধবার রাতে কৌশলে অধ্যক্ষকে বাসা থেকে তুলে নেয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের বিচারসহ অধ্যক্ষের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিকালে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালত-১ এর বিচারক নিশাত জাহান চৌধুরীর আদালতে অধ্যক্ষ মামুন পারভেজকে হাজির করে গোয়েন্দা পুলিশ।
অধ্যক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ আলম বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় অধ্যক্ষ মামুন পারভেজকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ডিবি কার্যালয় থেকে অধ্যক্ষকে আদালতে নেওয়ার পরে আমরা শুনানির আবেদন করলে আদালত আবেদন আমলে নেননি। তাকে কারাগারে পাঠান।
হাইওয়ে পুলিশ ময়নামতি ক্রসিং থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, খবর পেয়ে আমাদের হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে এনেছি। এরপর তারা দীর্ঘক্ষণ উপজেলা পরিষদেই ছিল। অধ্যক্ষ মামুন পারভেজ যেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি পায়, সেই বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছি।
কুমিল্লা ডিবির ওসি সাজ্জাদ করিম খান বলেন, বুধবার রাতে নগরীর একটি বাসা থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলা ও গুলির ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার এজাহারে তার নাম না থাকলেও তিনি তদন্তে প্রাপ্ত আসামি। দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আতঙ্কে অন্য শিক্ষকরা
কলেজ অধ্যক্ষসহ একই কলেজের দুইজনকে পরপর গ্রেফতারের ঘটনায় চান্দিনা মহিলা কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। একাধিক শিক্ষক বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ মামুন পারভেজ কোনো অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। শিক্ষকদের এভাবে লাঞ্ছিত করে সম্মানহানি করার নাম কি রাজনীতি? এখন কলেজে যাওয়া-আসা নিয়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসায় ঘুমানোও দায় হয়ে পড়েছে।