‘জয় বাংলা’ স্লোগান, মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে দেওয়া হল পুলিশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলিস্তানের বঙ্গব্ন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘শেখ হাসিনা আবারো ফিরে আসবেন’ বলায় বেশ কয়েকজনে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও কথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।

তাদের মধ্যে একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেন। তাঁর গলায় মুক্তিযোদ্ধার কার্ড ঝুলানো ছিল। তিনি বলেন, “জিনিসপত্রের দাম বেশি, ঘুসখোরেরা কী করবে এই দেশে? আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই কথা বলছি, ঘোলাটে হয়ে গেছে এ দেশ। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরে এদেশ ঠিক নেই। ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনা এদেশে আসবেন এবং দেশকে ঠিক করবেন। জয় বাংলা।”-এসব কথা বলার পরপরই উপস্থিত বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থকরা তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার সকাল থেকে ওই এলাকায় কারো গতিবিধি ‘সন্দেহজনক’ মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, সকাল থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নূর হোসেন চত্বর এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সন্দেহ হলেই ছাত্র-জনতা কাউকে আটক করে আমাদের কাছে দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১০-১২ জনকে হেফাজতে নিয়েছি।

‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’ মাঠপার্যায়ে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন ডিএমপির এই উপ কমিশনার। তবে প্রাথমিকভাবে আটকদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি প্রতিহতে রোববার সকাল থেকেই দলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিএনপি, এর বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিষম্যবিরোধী ছাত্ররা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের পর পুলিশে দেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। যাদের ধরা হয়েছে, তারা কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, আবার কেউ ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দেন।

বেলা ১টার দিকে এক বয়স্ক ব্যক্তি এসে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতেই তাকেও অসহনীয় নির্যাতন করে পুলিশে দেওয়া হয়।

স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর রাজপথে দলটির প্রথম কর্মসূচি।

ওই কর্মসূচি প্রতিহত করতে শনিবার মধ্যরাতেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সকাল ৯টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে মিছিলও করেন।

সিপিবি, বাসদ, গণধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সকালে নূর হোসেন চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, কর্মসূচির নামে কাউকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

শেয়ার করুন