‘সব কাজ বৈধ, মেয়াদ অনির্দিষ্ট’, সরকারের উদ্যোগে সিপিবির নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিপিবি
ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সব কাজ বৈধ’ ও মেয়াদ ‘অনির্দিষ্ট’ রেখে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তুতির খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি। এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে দলটি বলেছে, তারা কোনো কোনো বিষয়ে দায়মুক্তি দেওয়াকে সমর্থন করে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের সব কাজ ‘বৈধ’ এবং এর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তুতির খবরে শনিবার বামপন্থি দলটির সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বিবৃতি দিয়ে এ কথা বলেন।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের কথা তুলে ধরে দুই নেতা বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং নিন্দনীয়। আমরা সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চাই।

যে কোনো দায়মুক্তির ঘটনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম লক্ষ্য হল পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথকে মসৃণ করা। এই কাজটিকে প্রাধান্য দিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

এ ধরনের কোন কার্যক্রম গ্রহণ করার আগে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।

সংবিধানে উল্লেখ আছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে, দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে আরও ৯০ দিন অপেক্ষা করা যায়।

গত ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন দেবে, সেটি জানাচ্ছে না।

এরই মধ্যে ৯০ দিন পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে, যাতে সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্ট রাখার কথা উল্লেখ আছে।

এতে বলা আছে ত্রয়োদশ সংসদ গঠন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের দিন পর্যন্ত থাকবে এই সরকারের মেয়াদ।

সরকারের সব সিদ্ধান্ত ও আদেশ ‘বৈধ’ উল্লেখ করে খসড়া অধ্যাদেশে এও বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া যাবে না, সুপ্রিম কোর্টও কোনো আদেশ অবৈধ ঘোষণা করতে পারবে না।

রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার লিখিত পরামর্শ নিতে হবে, এমন কথাও বলা আছে।

নাটক বন্ধের প্রতিবাদ

শিল্পকলা একাডেমিতে ‘মব’ এর কাছে নতি স্বীকার করে নাটক বন্ধ করে দেওয়া ও নাট্যজনদের প্রতিবাদ সভায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের চিহ্নিত এবং শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন সিপিবির দুই নেতা।

বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এসবের বিরুদ্ধেই সচেতন দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সিপিবি নেতারা বলেন, দেশে কোথাও কোথাও, এমনকি কোর্ট কাচারিতে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ও সুযোগ বুঝে কাউকে কাউকে হেনস্তা করা করা হচ্ছে, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঘটনা চলমান গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে ব্যাহত করবে। পতিত ‘স্বৈরাচার’, দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তিকে অপতৎপরতার সুযোগ করে দেবে।

সুইজারল্যান্ডে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায়ও নিন্দা জানান সিপিবি নেতারা।

শ্রমজীবীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা, নির্যাতন বন্ধ এবং ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় যথাযথ ভূমিকা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

শেয়ার করুন