ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া কমিয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ এবং এ রুটে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার ফোরাম। সেই সঙ্গে আগামী ১৭ নভেম্বর (রোববার) নারায়ণগঞ্জ শহরে আধাবেলা হরতাল পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মশাল মিছিলটি শুরু করে বঙ্গবন্ধু সড়ক ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল প্রদক্ষিণের পর কালীরবাজার হয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে টানা ৯ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় যাত্রী অধিকার ফোরাম।
বাসভাড়া কমানোর দাবিতে সংগঠনটি ২৯ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দাবি মানা না হলে ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতালেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক, নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বাসভাড়া কমানোর পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। বাসভাড়া কমাতে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে।
গত কয়েক দিনে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যাত্রী অধিকার ফোরাম, বাস মালিক ও সরকারি কয়েকটি দপ্তরের সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তবে বাসভাড়া কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে আগামী ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যাত্রী অধিকার ফোরাম।
শুক্রবার সমাবেশে রফিউর রাব্বি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর গডফাদাররা পালিয়ে গেলে তাদের রেখে যাওয়া উচ্ছিষ্টের জন্য বাস মালিক নামধারী চাঁদাবাজরা পরিবহন সেক্টরকে জিম্মি করে রেখেছে।
২০১১ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ২২ টাকা থেকে ৩২ টাকা বৃদ্ধির পর আন্দোলন শুরু হয়। গত এপ্রিলের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে সাড়ে ১৯ কিলোমিটারে ভাড়া দেখানো হয়েছে ৫৩ টাকা। সেখানে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৫৪ টাকা, কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। এর বিরুদ্ধে বিআরটিএ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে রুটে দৈনিক ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে।
যার ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন ১ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে অবস্থান না করে এখনো মালিকদের পক্ষে আপনারা অবস্থান করছেন।’
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের উদ্দেশ্যে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম ১৫ তারিখের মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ভাড়া ৪৫ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত করা হয়নি। জেলা প্রশাসককে বলছি, এই গণদাবির প্রতি সম্মান রেখে ৪৫ টাকা ভাড়া ঘোষণা করুন। নয়তো আগামী পরশু দিন নারায়ণগঞ্জের মানুষ রাস্তায় নেমে হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি ঘোষণা করবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আগেও তাদের ন্যায্য দাবি কিভাবে আদায় করতে হয়, তা ইতোপূর্বে প্রমাণ দেখিয়েছে। আগামী পরশু দিনও দেখবেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমরা বাসভাড়া নতুনভাবে নির্ধারণের বিষয়ে মালিক ও যাত্রী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একাধিকবার বসেছি। উভয় পক্ষই তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। তবে দু -এক দিনের মধ্যে ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’