আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৫ সালের শেষে এ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
একসময় প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও ২০০৯ সালে তা বন্ধ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়। এ পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হতো।
তবে করোনাভাইরাস মহামারির জেরে ২০২০ সালে এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৩ বছর পর ২০২২ সালে ডিসেম্বরে ফের ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বৃত্তির জন্য নির্বাচিত ৮২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের মধ্যে ৩৩ হাজার জন ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) এবং ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন সাধারণ বৃত্তি পায়।
ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ২২৫ টাকা করে পায়।
উপজেলা বা থানায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা বা থানা কোটা নির্ধারণ করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বণ্টন করা হয়। সাধারণ বৃত্তি বিতরণ করা হয় ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক।
সেবার দেশের প্রতিটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরের বছর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় আর বৃত্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এ বছর তো আর সময় নেই, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনো চিন্তাভাবনার পর্যায়ে আছে।’
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যাওয়ায় আগামী বছর শিক্ষাক্রম সংশোধন হবে। তবে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে আগের শিক্ষাক্রমই বহাল ছিল। তবে আগামী বছর দুই শ্রেণির বই কিছুটা পরিমার্জন করা হবে।
সচিব বলেন, ‘আগের পাঠ্যক্রমে আমরা ফিরছি। বৃত্তি পরীক্ষাটা আগের মতোই নেওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে। সমাপনী পরীক্ষা চালুর আগে যেভাবে বার্ষিক পরীক্ষা আর বৃত্তির জন্য আলাদা একটা পরীক্ষা নেওয়া হতো, সেভাবে চিন্তা করা হচ্ছে।’
বৃত্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে- এ প্রশ্নে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণির মূল্যায়ন কোন পদ্ধতিতে হবে তা এনসিটিবি নির্ধারণ করে দেবে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।’
বৃত্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ পোহাতে হয় বলে আগে অভিযোগ ছিল অভিভাবকদের। এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘আগ্রহী পরীক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। আগেও এমনটি হতো।’