সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। চলতি বছরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানমতে, এক জানুয়ারি থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৭৯ হাজার ৯৮৪ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ৪১৫ জনের মধ্যে ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ নারী এবং ৪৯ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ।
প্রকৃতপক্ষে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি অত্যন্ত জটিল। বহুতল ভবনের প্রতি তলায় সিটি করপোরেশনের কর্মীদের প্রবেশের কাজটি কতটা কঠিন তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে গুরুত্ব বাড়াতে হবে এবং এই দায়িত্বটি সিটি করপোরেশনকেই পালন করতে হবে। বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করলেও সে অনুযায়ী সেবা মিলছে না। যেহেতু ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই, তাই সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এজন্য প্রথমেই রোধ করতে হবে এডিস মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার। কোথাও যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো নগরীর সর্বত্র, বিশেষ করে যেসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, সেসব স্থানে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলে এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বর্ষা মৌসুমে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময় সবাইকে বিশেষ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে; বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই রাজধানীসহ সর্বত্র মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে যত ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০১৯ সালে। জানা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও খারাপ হতে পারে। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতোই দীর্ঘ হতে পারে। কাজেই কর্তৃপক্ষ এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়।
আমরা আশা করব, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করার পূর্বেই কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে হলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরবাসীকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।