ট্রাম্পের ফেরার আগে ইউক্রেনে রুশ-মার্কিন স্বার্থের লড়াই

মত ও পথ ডেস্ক

ইউক্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ছবি : ইন্টারনেট

ইউক্রেন যুদ্ধে ফলাফলকে প্রভাবিত করতে গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন ও রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র দুই মাস আগে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ থামানোর যে দাবি ট্রাম্প করেছেন, তার আগে মস্কো চাচ্ছে যতদূর সম্ভব ইউক্রেনে ভূমি দখল বাড়াতে; আর বাইডেন চাচ্ছেন দীর্ঘদিনের ‘রেডলাইন’ ভাঙতে। ইউক্রেন ইতোমধ্যে বাইডেনের কথামতো প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েছে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে কিয়েভ। এ প্রেক্ষাপটে বাইডেন ৩০০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাইডেন প্রশাসন বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের নীতি পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের লড়াইয়ে যোগদান। যুক্তরাষ্ট্র এটাকে ‘গুরুতর উস্কানি’ বলে মনে করে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তেজনাকে আরও তুঙ্গে তুলেছেন পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের নীতি পরিবর্তন করে। মস্কোর দাবি, এর মাধ্যমেই ইউক্রেনের পরাজয় নিশ্চিত হবে। এক রুশ বিশ্লেষক জানান, এটাকে পুতিন অনেকটা অন্তর্বর্তী সময় হিসেবে বিবেচনা করছেন, যাতে তিনি ইউক্রেনের ওপর আরও আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন।

এ সপ্তাহের শুরুর দিকে রাশিয়া গত তিন মাসের মধ্যে তাদের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালায়। তাদের হামলার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইউক্রেনের নিউ জিওপলিটিকস রিসার্চ নেটওয়ার্কের প্রধান মিখাইলো সামুস বলেন, ঘটনাগুলোর একটির সঙ্গে অন্যটির যোগসাজশ আছে। তাঁর যুক্তি, হামলার উদ্দেশ্যে রাশিয়া শত শত সিকান্দর ও কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করেছে। বিষয়টি ওয়াশিংটনে ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে একটি মনস্তাত্ত্বিক বার্তা দিয়ে থাকে। বুধবার হয়তো কিয়েভে বড় কোনো হামলা হয়নি। তথাপি বার্তাটি ঠিকই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পৌঁছেছে। মিখাইলো সামুস বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা বসতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষ্যেই এসব কিছু ঘটছে। এটা দেখানোর জন্য যে, রাশিয়া ছাড় দেবে না এবং সবকিছু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর নির্ভর করছে।

একই কথা বলেছেন কিংস কলেজ লন্ডনের যুদ্ধবিদ্যা বিভাগের জেইড ম্যাকগ্লিন। তিনি বলেন, দুই পক্ষ চাচ্ছে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে। তবে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কোনো সমঝোতা চুক্তি হতে পারে, এ নিয়ে অত্যন্ত সন্দিহান তিনি। এ প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের ১০০০ দিন পূর্ণ করেছে ইউক্রেন। ওইদিন রুশ বাহিনী ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালায়। পাল্টা হামলায় ইউক্রেনও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বুধবার রাতে এ হামলা চালানো হয়। কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী রুশ ফেডারেশনের আস্ট্রাখান এলাকা থেকে হামলাটি চালানো হয়। ইউক্রেন বলছে, রাতভর রুশ হামলায় নাইপ্রো নদীর তীরবর্তী কয়েকটি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে বুধবার যুক্তরাজ্যের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালায় ইউক্রেন। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, তাঁর দেশ যতদিন প্রয়োজন, ততদিন ইউক্রেনের পাশে থাকবে। লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত বলে যাচ্ছি, ইউক্রেনকে সমর্থন করতে যা যা দরকার, তার সবকিছুই করব।’

শেয়ার করুন