বাংলাদেশকে নিয়ে চক্রান্ত করা হচ্ছে অভিযোগ এনে রংপুরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে, জীবন থাকতে এই ভূমি নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না।
দেশে হিন্দুদের ওপর ‘একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও’ সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে। বলা হয়েছে, হিন্দুরা কাউকে ‘ভয় পায় না’।
শুক্রবার বিকেলে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের পর থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের উপর একের পর এক নির্যাতন করা হচ্ছে। বাড়ি-ঘর জায়গা জমি দখল করা হচ্ছে।
“যেখানে আন্দোলন হচ্ছে সেখানেই সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অথচ তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও সরকার আমাদের আট দফা দাবি মেনে নিচ্ছে না। অথচ আন্দোলন করার অপরাধে আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হচ্ছে।”
যারা সনাতনীদের বিভক্ত করার চেষ্টা করবে তাদেরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে চিন্ময় বলেন, “এই দেশে আমাদের জন্ম, আমরা জীবিত থাকতে আমাদের এই ভূমি নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।”
মহানগরের মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই সমাবেশকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই নানা আলোচনা চলছিল।
সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার পথে কুড়িগ্রামে বাসে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে দুপুরের দিকে এ ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা দাবি করেছেন।
কুড়িগ্রাম শহর থেকে রংপুরগামী রুটের বাসগুলো যেতে দেওয়া হলেও রিজার্ভ করা বাসগুলো যেতে দেওয়া হয়নি। বাসগুলোকে ঘুরিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন।
দুপুরের দিকে জেলা শহরের ত্রিমোহনী বাজারে বাস আটক করলে যাত্রীরা নেমে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাঁচটি বাস ছেড়ে দেয়।
এর ঘণ্টাখানেক পরে ত্রিমোহনী মোড়ে আরও তিনটি রিজার্ভ করা বাস আসে। সেগুলো ফেরত পাঠানো হয় বলে অভিযোগ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
তবে রংপুরে সমাবেশস্থল ছিল লোকে লোকারণ্য। আর বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ সদস্যরা রাতে তাদেরকে হোটেল থেকে বের করে দিয়েছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, “এই সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। আমরা কোনো প্রহসন মেনে নেব না। এই দেশে তিন কোটিরও বেশি হিন্দু রয়েছে তারা কোনো ভয় পায় না। চট্টগ্রামে আমাদের অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে। সব সরকারের আমলে আমরা নির্যাতিত হয়েছি, আর হতে চাই না।”
উগ্রবাদী গোষ্ঠী সনাতনীদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ধর্মীয় কারণে আমাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।”
সনাতনীরা কোনো রাজনৈতিক দলের ‘দালাল নয়’ মন্তব্য করে ইসকনের নেতা বলেন, “আমাদেরকে নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবেন না। আমরা সরকারের বিপক্ষে নই। যারা আমাদের আট দফা দাবি মেনে নেবেন, তাদেরকেই আমরা ভোট দেব। আমাদেরকে জঙ্গি বলা হচ্ছে। আমরা জঙ্গি নই।”
আট দাবি
সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের পক্ষ থেকে তাদের আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ১৭ নভেম্বর এই মোর্চার আত্মপ্রকাশ হয়। তাদের দাবিগুলো হল-
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।
২. অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
৩. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
৪. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশনে’ উন্নীত করাসহ বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে রূপান্তর।
৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।
৬. সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ ও প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা।
৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড’ আধুনিকায়ন।
৮. দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটিসহ প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটির ব্যবস্থা করা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শ্রীমৎ কুশল বরণ, ফরিদপুরের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ব্রহ্মচারী শ্রীপাদ গোপীনাথ, চট্টগ্রামের ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের ব্রহ্মচারী লীলারাজ গৌর দাস, চট্টগ্রামের তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবিশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, ভারত সেবাশ্রমের বিপ্রনন্দ মহারাজ এবং রংপুরের বাবু দ্বীপকর।