বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কুমিল্লা মহানগর কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে ১৬ সদস্যদের এই কমিটি ঘোষণা করেন কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।।তবে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটির নেতৃবৃন্দের আশা- যারা এসব কার্যক্রম করেছেন, তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করবেন।
এর আগে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়। ১৯৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু রায়হানকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষরে আগামী ছয় মাসের জন্য এই কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।
পরে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত ওই কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন কমিটিতে পদবঞ্চিতরা। তারা রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কেন্দ্রঘোষিত ওই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ আজহারুল আমিনকে আহ্বায়ক এবং একই কলেজের ফাতিন ইশরাক মোল্লাকে সদস্য সচিব করে ১৬ সদস্য পাল্টা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এই কমিটিতে তালহা জোবায়েরকে মুখ্য সংগঠক ও নাইমুজ্জামানকে মুখপাত্র করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সৈয়দ আজহারুল আমিন বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঘোষিত কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। শনিবার বিকালে যারা এই কমিটির ঘোষণা দিয়েছেন, আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রাখলাম- এই কমিটি আপনারা কিভাবে ঘোষণা দিলেন? যারা আন্দোলনের সময় নিজের জীবনবাজি রেখেছিল, তাদের কাউকেতো আমি এখানে দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সম্মুখ সারিতে ছিলাম তাদেরকেও বঞ্চিত করা হয়েছে এই কমিটিতে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
ফাতিন ইশরাক মোল্লা বলেন, আন্দোলনের সময় আমাদের যাদেরকে সমন্বয়ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে নবগঠিত এই কমিটিতে দশজনকে রাখা হয়েছে কি-না আমাদের সন্দেহ রয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না। তাই আমরা নিজেরাই কমিটি গঠন করেছি।
প্রতিবাদ সমাবেশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগরের কেন্দ্রঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, গত ৪ অগাস্ট কুমিল্লার আলেখারচর বিশ্বরোডে ‘ছাড়তে হবে ক্ষমতা, ঢাকা আসছে জনতা’ এই ঘোষণা আমি দিয়েছি। আমি জানি, কুমিল্লায় কে-কোথায় আন্দোলন করেছে কার কতটুকু অবদান।
তিনি বলেন, গত রাতে (শনিবার) যারা সংবাদ সম্মেলন করছে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী। কিন্তু আমাদের কমিটি করার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মীকে কমিটিতে রাখার নিয়ম নেই। সৈয়দ আজহারুল আমিন কুমিল্লা জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। নাইমুজ্জামান কুমিল্লা জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক।
তিনি আরও বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যিনি নেতৃত্বদানকারী ছিলেন, তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া অন্যরা সবাই ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের সক্রিয় কর্মী। আমরা চাই যেকোনো লোক স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক চর্চা অব্যাহত রাখুক। আশা করি যারা এসব কার্যক্রম করেছেন, তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করবেন।