ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারে ভারতের উদ্বেগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চিন্ময় বাংলাদেশের নাগরিক। সে অপরাধ করুক বা না করুক; সেটি বাংলাদেশের আদালত দেখবে। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চিন্ময়কে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পোষ্য সন্তান যুবলীগ ছাত্রলীগ যখন কিশোর বিশ্বজিৎকে হত্যা করল, তখন আপনাদের বিবৃতি কোথায় ছিলো? আপনারা কি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন? ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে আপনারা কিছুই করতে পারবেন না। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারত নাগ গলালে ভালো কিছু হবে না।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে ‘ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও রচনা প্রতিযোগিতা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
চিন্ময় ইস্যুতে শেখ হাসিনার বিবৃতিকে কুমিরের কান্না আখ্যা দিয়ে রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে ও তার মুক্তি দাবি করে গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার একটা স্টেটমেন্ট দেখলাম। সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। হঠাৎ করে ইসকন নামের একটি সংগঠনের তৎপরতা দেখা গেল। সেই তৎপরতার মধ্যে এই দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য যত রকম পদ্ধতি নেওয়া দরকার সেটা করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। আপনি মুগ্ধ, আবু সাঈদ, নাফিসের মতো ছাত্রকে হত্যা করতে পারেন। আর আজকে চিন্ময় গ্রেপ্তার হয়েছে বলে আপনি ভারতে বসে কুমিরের কান্না কাঁদছেন। এর জন্য আপনি কি ভারতের কাছ থেকে পুরস্কার পাবেন?
ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ভারত থেকে নদীর বান ছেড়ে দিয়ে যখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা হলো। তখন তো শুধু মুসলমানদের ঘর ভেসে যায়নি, হিন্দুদেরও ঘর ভেসে গিয়োছিলো। সেদিন তো ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মায়া দেখলাম না। গত জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার শিশু, তরুণ, কিশোরকে নির্বিচারে হত্যা করলো শেখ হাসিনা। তখনও তো আপনাদের মায়া দেখলাম না। সেই হাসিনাকে আপনারা আবার আশ্রয় দিলেন। আজকে সারজিস-হাসনাত বলছে, তাদের দুর্ঘটনার পেছনে ইসকনের হাত রয়েছে। এগুলো কি হচ্ছে? আপনারা কি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন? ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে আপনারা কিছুই করতে পারবেন না।
বিপ্লব ও সংহতি দিবস সম্পর্কে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি ১৯৭১ সালে। তবে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম ৭ নভেম্বর। ৭১-এ আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও নাগরিক স্বাধীনতা ছিলো না। ছিলো না কথা বলার স্বাধীনতা। আর এই না থাকার মধ্যে কুড়াল নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাবা গণতন্ত্রের বৃক্ষকে কেটে টুকরো টুকরো করে একদল গঠন করে নাম দিলেন বাকশাল। সেই বাকশালের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে ৭ই নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিপাহি আর বাড়ি বাড়ি থেকে জনতা একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল। এই চেতনা ছিলো সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আর গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার। স্বাধীনতা যুদ্ধকে যারা বিজয়ের পথে নিয়ে গেছেন, তারা যদি মহান হন, শেখ মুজিবের অবস্থান তখন খাটো হবে। শেখ হাসিনা এটি জানতেন। এ জন্যই যারা বারবার স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য কাজ করেছেন, তাদেরকে তিনি হেয় করেছেন। হেয় করেছেন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে। হেয় করেছেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদকে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাসানাত আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হক প্রমুখ।