সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে নিহত ২০০

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর কাছ থেকে বেশ কয়েকটি অঞ্চল দখল করেছে তারা। উভয় পক্ষের লড়াইয়ে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ নভেম্বর) থেকে সিরিয়ার আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রামে ওই লড়াই শুরু হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এখনও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) অনুসারে, হামলার প্রথম দিনের শেষে বিদ্রোহীরা পশ্চিম আলেপ্পো গ্রামাঞ্চলে অগ্রসর হয়। তারা সিরিয়ান সেনাবাহিনীর ৪৬তম রেজিমেন্টের ঘাঁটি ও কমপক্ষে আটটি গ্রাম দখল করেছে।

বৃহস্পতিবার মনিটরিং গ্রুপটি জানায়, বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জারবাহের কাছে আলেপ্পো ও রাজধানী দামেস্কের মধ্যে হাইওয়ে কেটে ফেলেছে ও সারাকিবের কাছে আরও দক্ষিণে হাইওয়ের মধ্যে ইন্টারচেঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

এসওএইচআর জানিয়েছে, দুই দিনে ১২১ জন বিদ্রোহী, যাদের অধিকাংশই এইচটিএস সদস্য এবং ৪০ জন সরকারি সেনা ও ২১ জন মিলিশিয়ান নিহত হয়েছে।

বিদ্রোহীরা টেলিগ্রাম বিবৃতিতে বলেছে, তারা আলেপ্পো শহরের ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত খান আল-আসাল শহর দখল করেছে এবং সরকার সমর্থক বাহিনীর ২০০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে।

সিরিয়ার সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের বাহিনী সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলা করেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ বাহিনীর সহযোগিতায় চলছে এ মোকাবিলা। সরঞ্জাম এবং হতাহতদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আর ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও সহযোগী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের কয়েকটি শহর ও গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।

ইরানের সংবাদ সংস্থাগুলো বলছে, সিরিয়ায় সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ইরানের বিপ্লবী গার্ডের একজন সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিউমারস পুরহাশেমি আলেপ্পো প্রদেশে নিহত হয়েছেন।

এসওএইচআর জানিয়েছে, লড়াইয়ে উভয় পক্ষের ১৮০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। বিরোধী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমান হামলায় অন্তত ১৯ জন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে।

ইদলিব ৪০ লাখেরও বেশি লোকের বাসস্থান। এ এলাকার অনেকেই সংঘাতের সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছে ও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বসবাস করছে। অঞ্চলটির বেশিরভাগই এইচটিএস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) এবং তুর্কি বাহিনীর ব্যানারে পরিচালিত তুর্কি-সমর্থিত বিদ্রোহী দলগুলোও সেখানে অবস্থান করছে। বুধবার এইচটিএস ও এর মিত্ররা বলেছে, তারা আগ্রাসন রোধ করতে ও শত্রুর পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে তাদের আক্রমণ শুরু করেছে।

২০১১ সালে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করা শুরু করে সরকার। এরপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এতে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

২০২০ সালে আসাদের কট্টর মিত্র তুরস্ক ও রাশিয়া ইদলিব পুনরুদ্ধারে সরকারের চাপ থামাতে একটি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছিল। এর ফলে সহিংসতা কিছুটা কমেছিল। তবে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

গত মাসে সিরিয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন সিরিয়ার যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন,গাজা এবং লেবাননের যুদ্ধের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার সংঘাতের মিল পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, রাশিয়া কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিমান হামলা শুরু করেছে ও সরকারপন্থি বাহিনী ড্রোন হামলা গোলাবর্ষণ বাড়িয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

শেয়ার করুন