এনজিও ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকা জাতীয় ঐক্যের বৈঠকে অংশগ্রহণ ছিল না বেশির ভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের বেশি দলের প্রতিনিধিকে এ বৈঠকে দেখা যায়নি। এ বৈঠকে কয়টি দল অংশ নিয়েছে সে বিষয় স্পষ্ট করেনি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এ বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গড়ে ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫৩। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। ফলে বর্তমানে ৪৮টি দলের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা রয়েছে। বিদায়ী সরকারের আমলে এ সংখ্যা ছিল ৪৪। অন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৪টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরা হলো- আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন।
৪৮টি দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বৈঠকে যেসব দলের প্রতিনিধিকে দেখা যায় সেগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, সিপিবি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ-জাসদ), আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন।
এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ ও মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে দাওয়াত দেওয়া হলেও তাদেরকে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গেটে অতিথিদের তালিকায় নাম না থাকায় তারা ফিরে যান। তবে এ দুই মুক্তিযোদ্ধাকে অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া না হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তোলা ছবিতে জামায়াতের নেতাদের পাশে কয়েকজন বাম নেতাকেও দেখা যায়।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত যে দলগুলোকে বৈঠকে ডাকা হয়নি সেগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
দেশে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বেশ বেকায়দায় পড়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য গঠিত এ সরকারের আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহ কম বলে মনে করছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। এ নিয়ে সরকারের সমর্থক এ দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে ডাকা এ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল বেশির ভাগ নিবন্ধিত দল।