বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে আইনজীবীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও সমিতির সদস্যদেরকে এই শুনানি থেকে বিরত থাকতে বলার কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, জেলার বাইরে থেকে এসে শুনানি করতে তাদের কোনো নিষেধ নেই।
তিনি বলেন, আলিফ হত্যা মামলায় এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো আইনজীবী অংশগ্রহণ করেননি। সংশ্লিষ্ট অন্য একটা দুইটি মামলাতে আইনজীবী ওকালতনামা দিলেও তা পরে প্রত্যাহার করেছিল।
গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময়ের জামিন শুনানিতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ার পর আগামী ২ জানুয়ারি ফের শুনানির দিন ঠিক হয়েছে। এর মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলন করা হল।
সেই শুনানির আগের দিনই সনাতনী জাগরণ জোট অভিযোগ করে, ৭০ জন আইনজীবীর নামে মামলা করা হয়েছে যেন তারা চিন্ময়ের পক্ষে আদালতে হাজির হতে না পারে। কয়েকজন আইনজীবীর চেম্বারে হামলার অভিযোগও আনা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিষয়ে করা সংবাদ সম্মেলন করে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কোনো আইনজীবীকে বাধা দেওয়া হয়েছে, এরকম কোনো অভিযোগ আমরা আজকে পর্যন্ত পাইনি। আপনাদের কাছে কোনো অভিযোগ আছে?
তবে সমিতির সদস্যদেরকে এই শুনানিতে অংশ নিতে নিষেধ করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আলিফ আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। সদস্যরা আসামিপক্ষে দাঁড়িয়ে, ‘ওই আসামি নির্দোষ’ এ কথাটি বলবে না, এটি আহ্বান করেছি। তবে উকিল থাকবে না এ কথাটি বলিনি। কোর্ট আইনজীবী দিতে পারেন অথবা আসামিপক্ষ বাইরে থেকে আইনজীবী আনতে পারেন। এতে আমাদের বাধা থাকবে না।
নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চিন্ময় দাসের আইনজীবীকে আমরা কোনো বাধা দেইনি। উনার জন্য কোনো আইনজীবী সেদিন আসেননি। উনার উকিল থাকতে হবে। সেদিন কয়েকবার ডাকা হয়েছে, কেউ আসেনি। তবু কোর্ট ‘ন্যায় বিচার’ করেছে। পরে আবার দিন ধার্য করেছেন।
চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা একটি মামলার আসামি- এই বিষয়টি স্মরণ করালে নাজিম উদ্দিন বলেন, ওই মামলার আসামিদের মধ্যে আজকেও বেশ কয়েকজন আদালতে এসেছেন, মামলা পরিচালনা করছেন স্বাভাবিকভাবে। কেউ যদি আদালতে না আসে তা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমি তো আনতে পারব না। অনেকে আদালতে কার্যক্রম করছে। আমরা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের হত্যা মামলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছি। কিন্তু বাইরে থেকে আইনজীবী এনে উনারা ডিফেন্স করতে পারবে না, একথা আমরা বলিনি।
হত্যা মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবী থাকতেই হবে, এই নিয়মের কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিচার চলাকালে কোর্ট নিজেই আসামিপক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন। উকিল ছাড়া কিন্তু মামলা হবে না।
চিন্ময়কে অন্য মামলায় আসামি করতে হবে কেন?
আদালতে সংঘাতের সব মামলায় চিন্ময়কে আসামি করার দাবি কেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রিজনভ্যানে সিএমপির হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিয়ে তার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছে, কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই বক্তব্যের ফলে তার ‘সন্ত্রাসীরা’ গাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল। পরবর্তীতে সমস্ত কর্মকাণ্ড করেছিল। ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে তার সেই বক্তব্য সরাসরি জড়িত। ইতোমধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যেহেতু একটি হত্যাকাণ্ডে কেউ অংশগ্রহণ করে, কেউ পরিকল্পনা করে, কেউ নির্দেশ করেন- এটি আইনের ভাষা। আমরা মনে করি, আইনগতভাবে চিন্ময় দাশকে এ মামলাসমূহে আসামি করা অত্যন্ত জরুরি।
২৬ নভেম্বরের ঘটনা তদন্তে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুস সাত্তারকে প্রধান করে আইনজীবী সমিতি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বলেও জানান নাজিম উদ্দিন।
অন্য এক প্রশ্নে নাজিম উদ্দিন বলেন, আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। ইসকনকে নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি, আমাদের দাবির সাথে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। স্পষ্ট দাবি ইসকন একটি ‘সন্ত্রাসী দল’। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে আদালত অঙ্গনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন।
দাবির মধ্যে আছে আলিফ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা, ২৬ নভেম্বর ভাঙচুরকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারে আওতায় নিয়ে আসা, চিন্ময়কে সব মামলায় আসামি করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
আলিফ হত্যা মামলায় আসামিদের পক্ষে যেন কোনো আইনজীবী মামলা পরিচালনা না করেন, সেই অনুরোধও করা হয় লিখিত বক্তব্যে।