আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দেয়া, শেষ করা বা নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। ইউনুস বাহিনীর বাবা আইয়ুব খান পারেনি আর এরা কিভাবে শেষ করবে?

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন কর্তৃক নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন এই ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশ বিজয় লাভ করেছিল। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুসহ জনগণ যে নির্যাতন হত্যা গুম সহ্য করেছিল তার ফলশ্রুতিতে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী যখন ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করে তার পরেই ২৬ মার্চ জাতির জনক স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার পরে জাতির জনক এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য মাত্র ৩ বছর ৭ মাস সময় পান। ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তা বার বার লুন্ঠন করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে সেদিন হত্যা করার মাধ্যমে এই স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। সেই সময় যুদ্ধ অপরাধীসহ জাতির জনককে হত্যাকারীদের সরকারের বিভিন্ন পদে বসানো হয়। ৫ আগস্ট সেই একই ভাবে স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতা দখল করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো কিন্তুু তারা সেটা পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে যে উন্নয়নশীল দেশে গড়েছিলাম আজ তা ধ্বংস প্রায়। যখন দারিদ্র্যের হার ছিলো ৪১ ভাগ সেখান থেকে আমি ১৮.৭ ভাগে নিয়ে আসি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করি, একটা আধুনিক জাতি হিসাবে গড়ে তুলি। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে অতিক্রমের সকল প্রস্তুতি আওয়ামিলীগ নিতে থাকে। আওয়ামী লীগ মানেই খাদ্য নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা। আমাদের সময় সড়ক, নৌ, বিমান, টানেল, ৬ লেনের রাস্তা, একসাথে ১০০ সেতু উদ্বোধন, ডিজিটাল জনগোষ্ঠী তৈরি, আমার গ্রাম আমার শহর, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প যা বাংলাদেশের জনগনকে আশার আলো দেখায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ৩০ টাকা নিম্নবর্গদের ১৫ টাকা কেজি চাল এবং ১ কোটি জনগণকে টিসিবির কার্ড করে দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ই মাথা পিছু আয় ২৭৯৩ টাকা, ১৪৮ প্রকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কৃষক-মৎসজীবী-শ্রমিকদের খাদ্যের ব্যবস্থা, বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই বিতরণ, বৃত্তি ও প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি বলেন প্রবাসীরা যেনো বিনিয়োগ করতে পারে সেজন্য ব্যাংকিং, বীমা, টেলিকম, বিমান,হেলিকপ্টার সার্ভিস উন্মুক্ত করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে চক্রান্তকারীদের চক্রান্তের মাধ্যমে নির্বাচন ঠেকানোর যাত্রা শুরু করে ইউনুস। কিন্তু তখন তারা এই নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। পরে গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে পুলিশ, ছাত্র, আওয়ামী লীগ, সাধারণ মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। কোটা ২০১৮ সালে বাতিল করেছিলাম পরে আদালত যে রায় দেয় তাও আমরা স্থগিত করি, জুলাই আন্দোলনে বাধা দেয়নি, পুলিশকে নিষেধ করেছিলাম বাধা দিতে, আন্দোলনকারীদের গণভবনে ডাকাও হয়েছিলো কিন্তু তারা আসেনি, ১ দফা ঘোষণা করেছে। আমি রক্তপাত চাইনি তাই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আবু সাইদকে ওরাই হত্যা করেছে তার গুলি লাগে দুপুর ২:৩০-এ তখন তাকে হসপিটালে না নিয়ে রাত ৮ টায় নিয়েছিলো কেনো? মুগ্ধকে এত কাছ থেকে কারা গুলি করেছে? এই প্রশ্ন রাখেন তিনি। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাদের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে, অনেককে খুন করা হয়েছে এসব কারা করেছে সবাই দেখেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জুডিশিয়াল ইনকুয়ারি কমিশনে যে জজ নিয়োগ দিয়েছে সে নিজেই দলীয় এবং অপরাধী ছিলো। ইউনুস নিজেই ক্লিনটনের সভায় স্বীকার করেছে তারা কিভাবে ডিজাইন করে ক্ষমতাচ্যুত করেছে আমাদের। তাদের একজন বলেছে পুলিশ না মারলে, মেট্রোস্টেশন না পোড়ালে বিপ্লব সার্থক হত না। তারা প্রশিক্ষিত ক্যাডার, সন্ত্রাসী, জেনেভা ক্যাম্পের লোক, সাদা শার্ট পরিয়ে স্কুল কলেজের ছাত্র বানিয়ে যা করেছে জনগণ তা এখন বুঝতে পারছে।

তিনি বলেন, তারা গাজীপুর, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছিলো তবুও আমি গুলি চালাতে দেয়নি। তারা এখন সেসবের বিচার না করে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগিদের বাড়িতে হামলা, আগুন, লুটপাট হত্যা করছে। ছেলেকে না পেয়ে মা-চাচীকে হত্যা করেছে। বগুড়ায় ৮ জনকে হত্যা করেছে। যৌথবাহিনী গোপালগঞ্জে জনগণকে পিটিয়েছে। তারা নির্যাতিতদের পাশে থাকছে না। এভাবে সন্ত্রাসীদের সাহায্য করার মাধ্যমে তারাও একদিন ১৯৭১ সালের পাকিস্তানী বাহিনীর মত জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

তিনি আরও বলেন, ইউনুস বাহিনী শিক্ষক,সাংবাদিক, সচিব, পুলিশ, পিএসসি কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ সকল ক্ষেত্রে জোর পূর্বক চাকুরীচ্যুত এবং ওএসডি করছে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ করলে তাদের চাকরী দেবেনা, পড়াশোনা করতে দেবেনা.. এখন কি বৈষম্য হয়না? এখন বলুক ফ্যাসিস্ট কারা? ইউনুস ৬ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স ফাকি ছাড়াও ২৫ কোটি টাকা পাচার করেছে, লভ্যাংশের ৫% শ্রমিক কল্যাণে জমা দেবার কথা তাও সে দেয়নি। তার বিরুদ্ধে শ্রমিক মামলা, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়াসহ ৬ মাসের কারাদণ্ড ছিলো সেটাও সে মওকুফ করেছে। এমনকি ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হল.. যারা দোষী তাদের সবাইকে খালাস করে দিলো।

শেখ হাসিনা বলেন, বয়স্ক নেতাদের হাত কড়া পরিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়, তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে দেয়না, সংখ্যা লঘুদের ওপর হামলা করে. এখানে আইনের শাসন কোথায়? শাহ আমানত দরগাহ, মন্দির, চট্টগ্রামে গীর্জা মঠে হামলা করা হয়, ১১ টি গীর্জা ভাঙ্গা হয়েছে, তার বিচার কে করবে? আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলো ২৬ লক্ষ ভারতীয় এখানে চাকরী করে, সে এখন তাদের বাদ দেয় না কেন?

তিনি আরও বলেন, ধানমন্ডির যে বাড়ি থেকে ৬ দফা, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো, সেখানে জাতির জনকের স্মৃতি সংরক্ষিত ছিলো। আমরা যাকে ট্রাস্ট বানিয়েছিলাম, নিজেদের সম্পদকে জনগণের সম্পদ বানিয়েছিলাম, তারা সেটা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। গণভবনে, সংসদ ভবনে, সেতু ভবনে, টিভি ভবনে লুটপাট করেছে। রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যে তিনটি মূল বিষয় আছে আইন সভা, বিচার বিভাগ, এক্সিকিউটিভ তারা ফলো করেনা, সব তারা ধ্বংস করেছে। একটি গোছানো দেশকে তারা হাতে তুলে ধ্বংস করছে, সকলের পেটে লাথি মারছে। চুরি ডাকাতি সন্ত্রাস এখন বাংলাদশের অলিতে গলিতে বিরাজমান। কেউ শান্তিতে বাইরে যেতে পারেনা।

তিনি বলেন, আমার নামে ২৫০ টা হত্যা মামলা দিয়েছে এর মধ্যে কিছুদিন পরে আবার ৩৫ জন জীবিত হয়ে ফিরে এসেছে। তারা গণভবনে আক্রমণ করেছিলো শেখ রেহেনা আর আমাকে হত্যা করবে বলে তারা তা পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, জমি তারা দখল করেছে, আগুন দিয়েছে। শান্তির রাষ্ট্রকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এরা। আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় গেলে, যাদের চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে তাদের চাকরী ফেরত দেয়া হবে বলে জানান তিনি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

শেয়ার করুন