বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের পুরো সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীরা রাখাইনের প্রায় সব শহরই দখলে নিয়েছে। রাজ্যটির ১৭টি শহরের মধ্যে ১১টি দখলের পর সম্প্রতি আরাকান আর্মি ঘোষণা দিয়েছিল, আরও চার শহর পতনের দ্বারপ্রান্তে। এরই মধ্যে গত রোববার সশস্ত্র গোষ্ঠীটি গুরুত্বপূর্ণ মংডু শহর দখলে নেওয়ার কথা জানায়।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন বলছে, মংডু দখলের মধ্য দিয়ে আরাকান আর্মি এখন বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্তের পূর্ণ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেছে।

আরাকান আর্মি জানিয়েছে, মংডুর সর্বশেষ জান্তা ঘাঁটিটি দখলের সময় ‘কুখ্যাত’ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনসহ কয়েকশ সরকারি সেনাকে আটক করা হয়েছে।

থুরিন তুনসহ আটক জান্তা সেনাদের ছবি এবং ঘাঁটি থেকে জব্দ করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের ছবি প্রকাশ করেছে আরাকান আর্মি। তবে জান্তা বাহিনী মংডুর পতন নিয়ে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি।

জাতিগত বাহিনী জানিয়েছে, গত ১৪ অক্টোবর মংডু শহরের বাইরে শহরটির সর্বশেষ অবশিষ্ট সরকারি ইউনিট বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয়। জান্তার বিমান হামলার মধ্যে ৫৫ দিনের লড়াইয়ের পর গত রোববার ঘাঁটিটি দখল করেন তারা।

আরাকান আর্মি আরও জানিয়েছে, বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের জন্য লড়াইয়ের সময় সরকারি বাহিনীর ৪৫০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়েছে। আরাকান আর্মি সেনারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে। ঘাঁটি থেকে সেনারা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীসহ জান্তার মিলিটারি অপারেশনস কমান্ড ১৫ এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন এবং সরকারি বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘাঁটিটি দখলের কয়েক ঘণ্টা আগে ভেতরে আটকে পড়া সরকারি সেনারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে, তাদের সরিয়ে নিতে শাসক নেতার প্রতি আহ্বান জানায়। ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, তারা তিন মাস ধরে ঘাঁটিতে আটকা পড়ে আছে, শাসকগোষ্ঠীর নেতারা তাদের সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন তাদের অন্ধকারে ফেলে রেখেছেন।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী দমন অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার জন্য কুখ্যাত ছিলেন এই জেনারেল।

মান্দালয় প্রাসাদে অবস্থিত সরকারের কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ডের সদর দপ্তরে একটি জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রে আটক সরকারবিরোধী কর্মীদের নির্মম নির্যাতনের তদারকি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সরকারের পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার দায়িত্বও ছিল এই জেনারেলের।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সরকারের সামরিক বাহিনী থেকে দলত্যাগ করা সাবেক সেনা ক্যাপ্টেন জিন ইয়াও মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীকে বলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অবিচল আনুগত্য এবং কমান্ডের অধীনে থাকা সৈন্যদের প্রতি নির্মমতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি দেহরক্ষীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনো সরকারি সেনা যদি পালিয়ে যায় বা আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করে, তবে তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে। তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রকৃত পরিস্থিতি জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন, বিশেষ করে আহত সৈন্যদের অবস্থা সম্পর্কে।

জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’র সদস্য আরাকান আর্মি। তারা গত বছরের অক্টোবরে অপারেশন ১০২৭ শুরুর পর থেকে রাজধানী লাশিওসহ উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে। আরাকান আর্মি ২০২৩ সালের নভেম্বরে তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনে অভিযান সম্প্রসারণ করে।

শেয়ার করুন