গাজীপুরে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের তিন মুসল্লি নিহত ও প্রায় শতাধিক মুসল্লি আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোরে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের ছাউনীতে এ ঘটনা ঘটে। টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামে আমিরুল ইসলাম বাচ্চু (৭০), ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০), বগুড়ার তাজুল ইসলাম (৭০)।
এ ব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহতের খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমার আগে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা করার জন্য সাদ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। আর সাদপন্থিরা যেন ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছিলেন জুবায়েরপন্থিরা।
মঙ্গলবার রাত তিনটার পর মাওলানা সাদ অনুসারী শত শত মুসল্লি কামারপাড়া ব্রিজ পার হয়ে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের গেইট দিয়ে ময়দানে প্রবেশ করেন। এসময় ইজতেমা ময়দানের ফটকে জুবায়ের অনুসারীরা পাহারায় থাকায় তাদের মারধর করে ফটক খুলে ময়দানে প্রবেশ করেন সাদপন্থিরা। এসময় ময়দানের বিভিন্ন স্থানে ঘুমিয়ে থাকা জুবায়েরপন্থি মুসল্লিদের ওপর হামলা চালান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু মুসল্লি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লা মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ী নেজাম) মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বুধবার দুপুর ১২টায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করার কথা। সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত জানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিসসহ কয়েকজন সমন্বয়ক রাত আড়াইটায় কাকারাইল মসজিদে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়। একটু পরই খবর আসে সাদপন্থিরা আশপাশ থেকে বিভিন্ন গুন্ডা সন্ত্রাসী ভাড়া করে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের নতুন, পুরাতন সমস্ত সাথী জমা করে টঙ্গী ময়দানের ফরেনটেন্ট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সাদপন্থিরা মাঠে ইজতেমার কাজে নিয়োজিত ঘুমন্ত তাবলীগের সাথীদের ওপর রাত চারটার দিকে সন্ত্রাসীমূলক হামলা চালায়। এতে প্রচুর সাথী আহত হয় এবং ঘটনাস্থলেই মো. আমিনুল ইসলাম বাচ্চু নামে তাদের একজন সাথী নিহত হয়েছেন। বর্তমানে প্রচুর দাওয়াত ও তাবলীগের সাথী ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এবং ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পূর্বে আরও একজন মারা যান। তবে তার নাম জানতে পারিনি।
এদিকে মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সাথীরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টাকালে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তাইজুল ইসলাম নামে এক সাথী নিহত হন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় তাদের সাথীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। জেলায় জেলায় প্রশোসনের লোক তাদের সাথীদের বহনকারী গাড়ি আটকে দিচ্ছে ও ফেরত পাঠাচ্ছে।