চাঁদা না দেওয়ায় শাহবাগে দোকান বন্ধের হুমকি ছাত্রদল-যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি পাওয়া গেছে স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন শাহবাগ থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম। তবে চাঁদা আদায় না বরং দোকান মালিককে ‘আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতা’ দাবি করে তাকে দোকান করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অভিযুক্তরা।

অভিযুক্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হলেন- শাহবাগ থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস, যুবদল থেকে বহিষ্কারকৃত নেতা শহিদুল ইসলাম খোকন, ২১ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. শাহ আলম, শাহবাগ থানা ছাত্রদলের কর্মী শিমুল, স্বাধীন রেস্টুরেন্ট মালিক মো. নজরুল।

জানা যায়, গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে অভিযুক্তরা শাহবাগের আজিজ কোঅপারেটিভ মেডিসিন মার্কেটের উত্তর পাশে ‘বিসমিল্লাহ স্টোরে’ চাঁদা চাইতে আসেন। দোকান ‘ভাড়া বাবদ’ মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা দাবি করেন তারা। টাকা না দিলে দোকান তুলে দেওয়া হবে বলে জানান তারা। পরবর্তীতে দোকান মালিক চাঁদা না দিলে তারা মালামাল ফেলে দেন। পরে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) আসরের সময় শাহ আলম এবং মাগরিবের আগে শহিদুল ইসলাম খোকন এসে পুনরায় ভাড়া দিতে বলেন অন্যথায় দোকান উঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় দোকান মালিক সিদ্ধান্ত জানাতে দুইদিন সময় চাইলে তারা ফিরে যান।

সিসিটিভি ফুটেজে তাদেরকে শনিবার রাতে দোকানের সামনে ভিড় করে থাকতে এবং দোকানের মালামাল ফেলে দিতে দেখা যায়।

ভুক্তভোগী বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মো. রিপন বলেন, শনিবার রাতে যখন আমি দোকান থেকে চলে আসি তখন স্থানীয় ছাত্রদলের নেতারা ১৫-২০ জনকে নিয়ে আমার দোকানে আসে। এসময় আমার ৪ কর্মচারী সেখানে ছিল। পরে তারা দোকান ভাড়া বাবদ মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি ছোট ব্যবসা করি এত টাকা কোথায় পাবো বললে তারা আমার দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। একসময় তারা দোকানের মালপত্র নিচে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, শনিবার তারা চাঁদা না পেয়ে ফিরে গেলেও রোববার আসরের নামাজের সময় আমার কর্মচারী ফোন দিয়ে জানায় শাহ আলম ভাই এসেছে টাকা নিতে। পরে আমি সেখানে যাই এবং শাহ আলম ভাইয়ের সাথে কথা বলি। পরে মাগরিবের আগে খোকন ভাই পোলাপান নিয়ে এসে ভাড়ার (চাঁদা) বিষয়ে কথা বলে। পরে আমি তাদের থেকে দুইদিন সময় চেয়ে নেই।

ভাড়া কার হাতে পৌঁছতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারাই প্রতি মাসে আসবে টাকা নিয়ে যেতে। আলাদাভাবে কার হাতে টাকা দিতে হবে তা আমাকে বলা হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম ফুটপাথের দোকান তুলে দিতে। দোকানের মালিক সাদ্দাম যুবলীগ করে, তাই সে এখানে দোকান রাখতে পারবে না। আগে মার্কেটে ছাত্রলীগ ছিল এখন তাদেরকে উঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে টাকাপয়সা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আমাদের সিনিয়র আছে, আপনি তাদের সাথে কথা বলেন।

২১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. শাহ আলম বলেন, আমরা সেই দোকানে কোনো চাঁদা নিতে যাইনি। দোকানের মালিক আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতা। আন্দোলনের সময় সে অনেককে আহত ও নিহত করছে। পরবর্তীতে দোকান কাকে দেওয়া হবে সেটা দেখার বিষয় না, তার দোকান সেখানে থাকবে না তুলে। তবে তিনি দোকান মালিকের আওয়ামী লীগের পদের সংশ্লিষ্টতা ও হামলার ডকুমেন্টস দিতে রাজি হননি।

দোকান মালিক অপরাধী হলে পুলিশের হাতে কেন তুলে দিচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা পুলিশের কাছে পরে যাবো। যারা আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা তাদের চিহ্নিত করা আমাদের দায়িত্ব।

যুবদল থেকে বহিষ্কৃত শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, দোকানটা মার্কেট সভাপতির সাথে কথা বলে আমিই বসিয়েছিলাম (মার্কেট সমিতিতে টাকা দিতে হয় না)৷ পরে ছাত্রদলের ছোটভাই সুফিয়ান আমাকে বলে তার পোলাপান বেকার। তাই দোকানটা তাকে দিয়ে দিই। পরে ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা সাদ্দামকে দিয়ে দেয়। এখন আমরা এই দোকান বন্ধ করে দিতে চাই। আওয়ামী লীগের কোনো দোকান এখানে থাকবে না৷

তিনি বলেন, আমরা কোনো টাকা চাইতে যাইনি। রিপন (দোকানদার) যে অভিযোগ করেছে তাকে আমরা চিনিও না। দোকানটা আওয়ামী লীগ নেতা সাদ্দামের, আমরা সাদ্দামকে সেখানে দোকান করতে দেবো না। যদি কেউ তার কাছে টাকা চেয়ে থাকে তাহলে আপনারা ডকুমেন্টসসহ থানায় অভিযোগ করেন।

আওয়ামী লীগ করলেই আপনারা দোকান তুলে দিতে পারেন কি-না জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে আওয়ামী লীগের পক্ষের কি-না প্রশ্ন করেন এবং সাবেক কমিশনারের সাথে দেখা করতে বলেন।

তবে এ বিষয়ে দাবিকৃত দোকান মালিক সাদ্দাম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন