এনআইডি ‘তথ্য হস্তান্তরে’ জড়িতদের বাঁচার সুযোগ নেই: মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিসিসির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য হস্তান্তরে যে বা যারা জড়িত ছিল, তাদের বাঁচার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে এনআইডির ‘তথ্য হস্তান্তর’ করায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর আজ রোববার বিকালে নির্বাচন কমিশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যে ডেটা সেন্টার আছে, এগুলো আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকি, কিছু নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলোর আলোকে। আমরা ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানকে এ সেবা দিয়ে থাকি, যাদের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে। এরকমভাবে বিসিসির সাথেও আমাদের একটা চুক্তি ছিল। এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনে যে বা যারা জড়িত ছিল, তাদের তো বাঁচার আসলে কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রোববার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিসির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডির তথ্য-উপাত্ত যাচাই সেবা গ্রহণকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা ১৮৩, যার মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলও রয়েছে। এই সেবা নিতে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর কম্পিউটার কাউন্সিল দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে ইসির সঙ্গে।

সেই চুক্তি অনুযায়ী, কমিশনের তথ্য-উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো ব্যক্তি, স্বত্ত্ব, পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর, বিনিময়, বিক্রয় কিংবা অন্য কোনো পন্থায় দিতে পারবে না কম্পিউটার কাউন্সিল। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এই সংস্থাটি তা মানেনি বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর বলেন, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সাথে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চুক্তি ছিল। কিন্তু, যখন বিসিসি পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা নিজেদের মতো করে একটি সেবা চালু করে, যেখানে ইসি বা ইসি সচিবালয়ের সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সমর্থন ছিল না। কিছু-কিছু প্রতিষ্ঠান যারা ইসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তারা কম পয়সায় আমাদের কাছ থেকে সেবা নেওয়ার জন্য আমাদের সাথে চুক্তি না করে বিসিসির সঙ্গে চুক্তি করেছে কেনো সেটাও আমাদের বোধগম্য নয়।

চুক্তি বাতিল হলেও এনআইডির তথ্য বিসিসির কাছে রয়ে গেছে, তার কী হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের যে ভোটার তালিকা, সেটার বাইপ্রোডাক্ট কিন্তু এনআইডি। এই ভোটার তালিকার যত তথ্য আছে, সব তথ্য কিন্তু উনাদের লাগে না। কারও ৪টা, কারও ৫টা, কারও তিনটা এরকম তথ্য লাগে। সেগুলো থেকে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চুক্তি অনুযায়ী ওইটুকু তথ্যই দিতাম। তারা আলাদা করে কোনো তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে পেরেছে কি না, আমার জানা নেই। যদি সে রকম হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিবে।

তথ্য ‘বিক্রির’ সঙ্গে জড়িত বাইরের পক্ষগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর বলেন, আমার মনে হয় কেউ-ই এর বাইরে থাকতে পারবে না।

চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী বিসিসি কমিশনের তথ্য-উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো ব্যক্তি, স্বত্ত্ব, পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর, বিনিময়, বিক্রি কিংবা অন্য কোনো পন্থায় প্রদান করতে পারবে না মর্মে শর্ত থাকলেও বিসিসি কর্তৃক তা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও বিসিসি জবাব দেয়নি। এরপর ৬ অক্টোবর ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হলে বিসিসি যে জবাব দেয়, তা নির্বাচন কমিশনের কাছে সন্তোষজনক বলে গণ্য হয়নি।

অন্যদিকে, চুক্তি অনুযায়ী প্রযোজ্য ফি বা চার্জসমূহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করায় চুক্তি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে চুক্তিটি বাতিলযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।

চিঠি দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করে চালানের কপি দাখিল করার জন্য বিসিসিকে অনুরোধ করেছে ইসি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিসিসির কাছে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইসির বকেয়া আছে ২ কোটি ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৭ টাকা।

শেয়ার করুন