দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনের পক্ষে রায় দেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় এবার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু’কেও অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট।
বিবিসি লিখেছে, রাষ্ট্রপ্রধানকে অভিশংসনে ১৫১ ভোটের প্রয়োজন ছিল। হানকে সরানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন ১৯২ জন আইনপ্রণেতা।
সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইউন পার্লামেন্টে অভিশংসিত হওয়ার পর গেল ৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী হান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।
রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল হানের; কিন্তু বিরোধী এমপিরা তাতে রাজি নন। তাদের ভাষ্য, ইউনের অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্নের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
শুক্রবার ভোটাভুটি নিয়ে পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার উ ওন-শিক যখন ঘোষণা দিলেন যে অভিশংসন বিল পাসের জন্য ১৫১ ভোট পক্ষে পড়লেই চলবে, তখন ইউন ও হানের ক্ষমতাসীন পিপলস পাওয়ার পার্টির (পি) আইনপ্রণেতারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এর মানে হল ইউনকে অভিশংসনের জন্য যেখানে ২০০ ভোটের প্রয়োজন হয়েছিল, এক্ষেত্রে তার দরকার হবে না। অর্থাৎ, ক্ষমতাসীন আইনপ্রণেতাদের ভোট ছাড়াই হানকে অভিশংসিত করা যাবে।
বিবিসি লিখেছে, ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা ভোট কক্ষের মাঝখানে জড়ো হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে থাকেন এবং স্পিকারের পদত্যাগের দাবি করেন। তাদের বেশিরভাগই ভোট বর্জন করেন।
পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে অভিশংসনের প্রজ্ঞাপন দিলেই হানকে তার দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হবে।
তবে ইউনের মত হানের অভিশংসনের ক্ষেত্রেও সাংবিধানিক আদালতের অনুমোদন নিতে হবে। পার্লামেন্টে অভিশংসনের পক্ষে যে রায় এসেছে, তা বহাল রাখা উচিত কি না, সে প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য সাংবিধানিক আদালত ১৮০ দিন সময় পাবে।
অভিশংসনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হান বলেন, আমি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।
এখন সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করার কথাও বলেন তিনি।
ইউনের অভিশংসন মামলা বিচারের জন্য পার্লামেন্টের বেছে নেওয়া তিন বিচারকের নিয়োগ হান আটকে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা।
কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত সাধারণত ৯ সদস্যের বেঞ্চ নিয়ে গঠিত হয়। পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে হলে অন্তত ছয়জন বিচারককে ইইউনের অভিশংসনের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে।
বেঞ্চে বর্তমানে ছয়জন বিচারক রয়েছেন, তার মানে তাদের যে কোনো একজন অভিশংসনের বিরোধিতা করে ইউনকে অপসারণ হাত থেকে বাঁচাতে পারেন।
বিরোধীরা আশা করেছিল, নতুন তিন বিচারক নিয়োগ হলে ইউনের অভিশংসনের পথ প্রশস্ত হবে।
শুক্রবার অভিশংসন বিল পাসের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে হানের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মক।
বিবিসি লিখেছে, হানের অপসারণের সিদ্ধান্ত দেশটির চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তাকে আরও তীব্র করবে।
১৬ বছর আগে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা দেয়, সেই সময়ের পর থেকে শুক্রবার কোরিয়ার মুদ্রা ওনের মান ডলারের বিপরীত সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। এ পরিস্থিতির জন্য দেশটির রাজনৈতিক দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে।