বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কাঠামোটা যদি না থাকে, ওপর থেকে শুধু চাপিয়ে দিলেই আমরা দ্রুত কোনো কিছু করতে পারবো না। তাই আমাদের স্ট্রাকচারটাকে (কাঠামো) ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা গণতান্ত্রিক উপযোগী করতে পারি, তাহলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারবো।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন, জাতীয় সংলাপ ২০২৪’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ এখন একটা জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে যে কাজটা আমাদেরকে করতে হবে, অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশকে আমরা যেন স্বপ্নের মতো করে গড়তে পারি। সে বিষয়টা যতটা স্থির করা যায়, ধারণ করা যায়, এমন অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ৫৩ বছর পর সংস্কার, নির্বাচন নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। ভালো হতো আমরা যদি এ বিষয়গুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারতাম। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা ২০১৬ সালে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি-তে একটা সংস্কার প্রস্তাব করেছিলাম। যে বিষয়গুলো পরিবর্তন আনা দরকার সেগুলো নিয়ে প্রস্তাবে এনেছিলাম। সে বিষয় থেকেই আজকের সামনে এসেছে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতার ভারসাম্য, একই ব্যক্তি যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। সে বিষয়টা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট এ বিষয়টি তখনই আমরা তুলে ধরেছি। আমরা ২০২২ সালে একটি জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে ১০ দফা দাবি পেশ করি। পরবর্তী সময় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একমত হয়েও আলোচনা করে আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব করি, এমন কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে আমরা প্রথম থেকেই। তবে দুর্ভাগ্য আমাদের কিছু কিছু বক্তৃতা এসেছে বিএনপির সংস্কার চায় না, এ কথাটি সঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটা সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি কেন? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন হচ্ছে প্রধান ফটক, দরজা। আর একটা ডেমোক্রেসি’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা এ দেশে গণতান্ত্রিক চর্চায় হয়নি। এখানে সে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেই কালচার না থাকায় আমাদেরকে বারবার বলতে হচ্ছে, এ করতে হবে ও করতে হবে, এইটা ডেমোক্রেসি, এইটা এভাবে যেতে হবে। ডেমোক্রেসি কিন্তু বারবার চর্চা প্র্যাকটিস ছাড়া গড়ে উঠবে না। হুট করে কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না। উদাহরণ হিসেবে মির্জা ফখরুল বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সে তিনটি নির্বাচনী গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সেটি মানুষ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বা বিশেষজ্ঞ নই। আমি মাঠ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে এখানে এসেছি, তৃণমূল থেকে কাজ করেই এ পর্যায়ে এসেছি। ধারণা তুলে ধরে বলেন , জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না। জনগণকে তৈরি করতে হবে আপনাকে। এখানে যারা আছেন, তারা জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক করার চেষ্টা করবেন।
সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রিয়াজের বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিয়াজ বলেছেন তার কাছে এক লাখের বেশি প্রস্তাব এসেছে। শুনেছি, এ প্রস্তাবগুলো তৈরি করে তারা সরকারের হাতে তুলে দেবেন, সরকার তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবেন। উনারাই (রিয়াজরা) যদি প্রথমে পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে বসতেন, সেটা আরও ভালো হতো। আমার কাছে মনে হয়। তারা গভর্মেন্টের সঙ্গে বসবেন, আরও আলোচনা হবে। আমার কাছে মনে হয়, যত সময় বাড়বে, তত আমাদের সমস্যা বাড়বে। আসল প্রবলেম তো অন্য জায়গায়। এগুলো বাস্তবায়ন করবেন কাদের দিয়ে? প্রশাসন, গভর্মেন্ট মেশিনারি, এগুলো তো এখনো ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। একটা ফাইলও নড়ে না। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ফাইল কোথায় আটকে আছে দেখবেন? ওখানেই আটকে আছে। এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়তে হবে।
আমরা যেন ৭১-কে ভুলে না যাই এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল এটাকে আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই। আমাদের চারপাশে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যে সংগ্রাম লড়াই ,একাত্তরের পর থেকে সেই লড়াই সংগ্রাম প্রত্যেকে আমাদের মনে রাখা দরকার। সে লড়াই সংগ্রাম ও ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।
ফখরুল বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় গণতন্ত্র ও সংস্কারের পক্ষে। এর জন্য আমরা কাজ করবো, করেছি, করবো ভবিষ্যতে। একই সঙ্গে আমরা মনে করি, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না।