চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯১ শতাংশ কমে গেছে; আর ২৭ শতাংশ কমেছে অর্থছাড়ের পরিমাণ।
ইআরডি বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ৫৮৫ কোটি ৯১ লাখ ডলারের ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পায় সরকার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি মেলে ৫২ কোটি ২৬ লাখ ডলারের; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯১ শতাংশ কম।
কোনো ঋণ আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার পর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, অর্থায়নকারী দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হলে তা প্রতিশ্রুতি হিসেবে ধরা হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রোববার চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরের বিদেশি ঋণ ও অর্থছাড়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রতিশ্রুত বিদেশি ঋণ ও অনুদানের মধ্যে ১৫৪ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছাড় করাতে পেরেছে সরকার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ হিসাবে অর্থছাড় কমেছে ৫৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার বা ২৭ শতাংশ।
গণ আন্দোলনের কারণে গত জুলাই ও অগাস্টে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ অস্থিতিশীল ছিল। আন্দোলনের প্রভাব এবং সরকারের পালাবদলে বাধাগ্রস্ত হয় বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঋণের প্রতিশ্রুতি কিংবা অর্থছাড় কমে আসার পেছনে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনেরও একটা প্রভাব রয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছর বহু দিক থেকেই ব্যতিক্রম। প্রথম দুই-তিন মাস অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে ছিল। বিদেশি ঋণ মূলত আসে প্রকল্প বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে। বাস্তবায়ন অর্থবছরের শুরুতে এমনই ধীরগতি থাকে। জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের প্রভাবে চলতি অর্থবছরের গতি আরও কম।
ইআরডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ মাসে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১৭১ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে সরকার ঋণছাড়ের মাধ্যমে যে অর্থ পেয়েছে, তারচেয়ে ১৬ কোটি ডলার (১১ শতাংশ) বেশি খরচ করেছে ঋণ পরিশোধে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৯৮৬ কোটি ডলার ঋণ পায় বাংলাদেশ। এসময় বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার।
সাধারণত অর্থছাড়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমই থাকে। আগের দুই অর্থবছরের চিত্রও তেমনটাই ছিল।
এবারের চিত্র ‘ভিন্ন’ হওয়ার ব্যাখ্যায় জাহিদ হোসেন বলছেন, আগে যে বিদেশি ঋণ নিয়েছি, তার ব্যবহার সঠিক হয়নি। রিটার্ন পাচ্ছে না সরকার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো হয়েছে, গ্যাসের অভাবে এখন তা পড়ে আছে। চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কর্ণফুলী টানেল করা হয়েছে, সেখান থেকেই রিটার্ন আসছে না।
তিনি বলেন অন্তর্বর্তী সরকারকে সব প্রকল্প এখন তাই পুনরায় বিবেচনা করতে হচ্ছে। শুধু তো ঋণ নিলেই হবে না; এর ব্যবহারের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।