প্রসঙ্গ : অধ্যাদেশ জারি করে শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বৃদ্ধি

সম্পাদকীয়

শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বৃদ্ধি
শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বৃদ্ধি। নমুনা ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করেই মোবাইল ফোনে কথা বলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ সেবা, ইন্টারনেট সেবা, কোমল পানীয়, সিগারেটসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক ও কর বাড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো- মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫। এ দুটি অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ফলে এ অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।

ফ্রিজ, এসি ও মোটরসাইকেলের করপোরেট কর বাড়ানোর পর এবার শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ক বাড়াল সরকার। ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে। মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে। বাড়বে রেস্তোরাঁয় খাবারের খরচও। এর আগে গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এনবিআরের প্রস্তাব পাস করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ না থাকায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুল্ককর বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

অবশ্য সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে না এবং মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, জনস্বার্থে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির শুল্ক কর হারে ব্যাপক ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি ও হার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাজারের বাস্তব চিত্র যে ভিন্ন! ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পণ্যের দামে এ সিদ্ধান্ত বা অধ্যাদেশ জারির প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো।

বলতেই হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর দীর্ঘ সময় অতিক্রম হলেও নিত্যপণ্যের বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নানান ছলছুতোয় হুহু করে বাড়ছে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে একটি অসৎ অতি মুনাফালোভী নব্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার থেকে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি। যা খুবই হতাশাজনক। মত ও পথ সহ দেশের প্রতিটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জনদুর্ভোগের চিত্র; টের পাওয়া যাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছি। সাধারণ মানুষ বাঁচাতে নিত্যপণ্যের শুল্ক ও কর কোনো উপায়ে কমানো সম্ভব কি-না তেমনটিও ভেবে দেখা জরুরি বলে মনে করছি।

 

শেয়ার করুন