‘গণশত্রু’ ডাক শুনতে হলো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুলকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে ‘গণশত্রু’ ডাক শুনতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কয়েকজন তরুণ আড্ডা দেওয়ার সময় সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তাকে দেখে এ সম্বধোন করে তারা। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সম্পদের বিবরণী লিখে ফেসবুকে নিজের আইডিতে একটি পোস্ট করেন প্রেস সচিব। এ সময় তিনি ‘গণশত্রু’ ডাক শোনার বিষয়ে জানান।

শফিকুল আলম বলেন, সম্প্রতি দেখছি, আমাদের এলাকার মসজিদের ভিক্ষুকরাও আমাকে চেনেন। কিছুদিন আগে কয়েকজন তরুণ আমাকে তাদের আড্ডার সামনে দিয়ে হাঁটার সময় ‘গণশত্রু’ বলে ডেকেছিল। এ কারণে আমাকে হয়তো শিগগিরই সরকারি একটি ফ্ল্যাটে চলে যেতে হবে। আমার পরিবার এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।

এলাকার প্রতি টান অনুভব করে প্রেস সচিব বলেন, ২০১৪ সালে আমি শাহীনবাগে ১১০০ বর্গফুটের একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। ভাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছু টাকা দিয়েছিলেন, আর বাকিটা আমার সঞ্চয় থেকে দিয়েছিলাম। আমি জায়গাটি ভালোবাসি। তবে নিরাপত্তার কারণে হয়তো খুব শিগগিরই এই ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে হবে।

পোস্টে শফিকুল আলম তার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। তিনি জানান, তার বাবার পাঁচ তলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ১১৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে শাহীনবাগে শ্বশুরবাড়ির সহায়তা ও সঞ্চয়ের টাকায় ১১০০ বর্গফুটের একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কেনেন। এ ছাড়া শ্যালকের কাছ থেকে ময়মনসিংহে একটি ফ্ল্যাট কেনেন এবং স্ত্রী একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন তার মা-বাবার কাছ থেকে; যা মাসিক আয়ের একটি উৎস।

তিনি লিখেন,  এ ছাড়া গ্রামে আমার ৪০ শতাংশ আবাদি জমি আছে। বহু বছর ধরে একটা ভ্রান্ত ধারণায় ভুগেছি যে অবসরে গ্রামে ফিরে যাব। শুধু লিখব আর হাঁটব—এটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু এখন মনে হয়, গ্রামে আর কখনো ফিরে যাওয়া হবে না। হয়তো আমি মরে গেলে আমার সন্তানরা আমাকে বাবা-মায়ের পাশেই কবর দেবে।

তার একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১১.৪ মিলিয়ন টাকা) সঞ্চিত আছে বলে জানিয়েছেন প্রেসসচিব। এই টাকার অধিকাংশ তার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিতে চাকরির পেনশন এবং গ্র্যাচুইটি। দুই দশক চাকরি শেষে গত আগস্ট মাসে এএফপির চাকরি ছাড়েন শফিকুল আলম।

তিনি আরও বলেন, কিছু মানুষ আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার ধারণা, বছরের শেষে আমার সঞ্চয় হয় অপরিবর্তিত থাকবে, নয়তো খরচের কারণে কমে যাবে। আমার একটি গাড়ি আছে। ঢাকা শহরে একটি গাড়ি পরিচালনা এবং ড্রাইভার রাখার মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

সবশেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলেন, আমি জানি না, প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শেষ করার পর আমার ভাগ্য কোথায় নিয়ে যাবে। তবে নিশ্চিত জানি, এই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কোনো কাজ না পেলেও আমি মধ্যবিত্তের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতে পারব। ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই আপনার উপার্জন নিয়ে মিথ্যা রটায়। এটাই আমার পূর্ণাঙ্গ সম্পত্তির প্রকাশ।

শফিকুল আলম পেশায় একজন সাংবাদিক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তখন থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন শফিকুল আলম।

শেয়ার করুন