বরিশালের চরমোনাই পীর পরিবারের সৃষ্ট দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পদাধিকারবলে পীর দলের আমির। রাজনীতির ময়দানে পীরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা ধর্মভিত্তিক অন্য দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জামায়াতে ইসলামীকে আক্রমণ করে বক্তৃতা-বিবৃতি দেন। জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা কখনও চরমোনাই দরবারে যাননি। তবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার চরমোনাই দরবারে গিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চমক দেখিয়েছেন। দুটি দলের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় নতুন করে ডালপালা মেলেছে।
ডা. শফিকুর এদিন নগরীতে জামায়াতের কর্মিসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চরমোনাই দরবারে যান তিনি। পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম তাকে অভ্যর্থনা জানান। জামায়াত আমিরকে মাদ্রাসা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। পীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীমের কবর জিয়ারত করেন তিনি। দুই শীর্ষ নেতা ও তাদের সঙ্গীরা মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় মসজিদে জোহরের নামাজ পড়েন। তারা একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন। রুদ্ধদ্বার কক্ষে তারা কথা বলেছেন।
দুই শীর্ষ নেতা উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তবে জামায়াত আমিরের চরমোনাই সফরের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেননি কেউ। সৌজন্য সফর বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন দুই নেতা। এই সফর আগামী নির্বাচনে ঐক্যের ইঙ্গিত কিনা– সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাব স্পষ্টভাবে না দিলেও ভবিষ্যৎ ঐক্যের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা শুধু আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসি, আল্লাহ যেন আমাদের এই ভালোবাসাকে কবুল করেন। আমাদের এই সম্মিলন শেষ নয়, শুরু হিসেবে যেন কবুল হয়। আমরা এক আছি, একসঙ্গে কাজ করব। জনগণের প্রত্যাশা, সব ভোটকেন্দ্রে যেন একটা বাক্স থাকে।’
চরমোনাই পীর বলেন, আগে থেকেই বলছি, ইসলামের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে আমরা যেন একটি বাক্স বসাতে পারি। সে চেষ্টাই চলছে। ৫৩ বছর ধরে ইসলামী দলগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে দূরে রাখা হয়েছে। আগে অনেক রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে আমাদের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ৫ আগস্টের পর ইসলামের পক্ষে একটি ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা যদি ভালো সিদ্ধান্ত না নিতে পারি, সেটি অকল্যাণকর হবে।
জামায়াত নেতার চরমোনাই সফর প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, জামায়াতের আমিরের আগ্রহে এটি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। দুই আমির একমত হয়েছেন যে, জাতি নতুন বন্দোবস্ত চায়।
অন্যদিকে চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীরের ছোট ভাই মুফতি জিয়াউল হক বলেন, ‘আদর্শিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের মিল নেই। তাই কোনো ঐক্য হতে পারে না। জামায়াত আমির সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন। কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি।’
জামায়াত আমির গত ২ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চল সফরের সময় ঝালকাঠির নেছারাবাদ মাদ্রাসা ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার ছারছীনা পীরের বাড়িতে যান। ছারছীনা ও নেছারাবাদ দরবার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নেই। তবে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে ছারছীনা ও নেছারাবাদের অঘোষিত যোগসূত্র আছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার বরিশাল নগরীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়; গণহত্যার সিন্ডিকেট। আগে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার হোক, ক্ষতিগ্রস্তরা উপযুক্ত বিচারটা পাক। তারপর তারাই সিদ্ধান্ত দেবেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা।
নগরের বান্দ রোড ঈদগাহ মাঠে হওয়া এ সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আপনি তো নিজেকে দেশপ্রেমিক দাবি করেন। সত্যিই দেশটাকে ভালোবাসলে বিদেশে পড়ে আছেন কেন? দেশে আসেন। আমাদেরও আপনারা বারবার জেলে পাঠিয়েছিলেন। আপনারা আমাদের যেভাবে রেখেছিলেন, আমরাও আপনাকে সেভাবেই রাখব।’
বরিশাল নগর জামায়াতের সভাপতি জহির উদ্দিন বাবরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল হালিম প্রমুখ।