বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুই ছাত্রীও রয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারামারির ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার ঢাকার ডেমরায় তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার বিচার চাইতে আজ তাঁরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ফটকে (রূপায়ন ট্রেড সেন্টারের দ্বিতীয় তলায়) অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের মধ্য থেকে একজন ‘সমন্বয়কদের গুনি না’ এমন কথা বলেন। তাঁর এই কথাকে কেন্দ্র করে মারামারির সূত্রপাত হয়।
হামলায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরা ঢাকার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্র জানায়, যাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁরা হলেন মিম, রাবেয়া, আশরাফ, ইমরান, মাসুদুর, আলামিন, ফারহান ও হাসিব।
ঘটনার সূত্রপাত: যা জানা গেল
ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। সেখানে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত (সাংগঠনিক কোনো পদ নেই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফায়াত হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশীদ ও আসাদ বিন রনির উপস্থিতিতে গত সোমবার ডেমরায় তাঁদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছিল। এ ঘটনার বিচার চাইতে তাঁরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা আশা করেছিলেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করবেন।
সাফায়াত বলেন, কার্যালয়ের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। তখন অন্য পক্ষ (ডেমরার হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা) এলে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা ইমরান নামের একজন বলেন, ‘সমন্বয়কদের গুনি না।’ এ জন্য তাঁকে টেনে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যায় অন্য পক্ষ। মূলত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি শুরু হয়।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে উল্লেখ করে সাফায়াত বলেন, তাঁরা (সমন্বয়কেরা) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। সমন্বয়কেরা অবশ্য আক্রমণ করেননি।
ঘটনার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ শাকিলও একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, কার্যালয়ের শাটার (দরজার সামনের ঝাঁপ) বন্ধ করে ভেতরে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। ডেমরায় যাঁরা হামলা করেছিলেন, এই হামলাতেও তাঁরা অংশ নিয়েছেন।
মারমারির ঘটনায় আহত হওয়া যাত্রাবাড়ীর মাদ্রাসাশিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র নামের কিছু সন্ত্রাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে গেছে। আর সমন্বয়কেরা হামলায় উসকানি দিয়েছেন।
যা বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ
মারামারির খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ কার্যালয়ে এলে সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে নানা অভিযোগ করেন। তাঁরা হাসনাতকে বলেন, মারামারির সময় সাংবাদিকদের মুঠোফোন বের করতে বাধা দেওয়া হয়। আবার অনেকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারামারির ভিডিও মুছে ফেলা হয়। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিক মারধরের শিকার হন। ছাত্রলীগ সাংবাদিকদের সঙ্গে যে কাজটা করত, সেই কাজই এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করছে কি না, সেই প্রশ্নও হাসনাতকে করা হয়।
পরে হাসনাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টা উদ্বেগজনক। বিষয়টা আমি দেখব, জানব। পুরো পরিস্থিতি একটু বুঝতে হবে।’
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে হাসনাত বলেন, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই আন্দোলন হয়েছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজ্ঞপ্তি
ঘটনার পর সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপথগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা জোরজবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেন।। এতে কার্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আগত ব্যক্তিদের দাবিদাওয়া শুনতে চান; কিন্তু তাঁরা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপরও চড়াও হন। এতে নির্বাহী সদস্য নাঈম আহত হন। পরে অন্য নেতা–কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। তখন পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীদের কার্যালয় ত্যাগে বাধ্য করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিরা কেউ কেউ গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিলেও কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিক পরিসরে যুক্ত নয়। এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।