পাবনায় অস্ত্রের মুখে আশ্রয়ণ কেন্দ্র ভাঙচুর-দখল, ঘরহারা ৬০ পরিবার

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনায় অস্ত্রের মুখে আশ্রয়ণ কেন্দ্র দখলে নিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এ সময় প্রকল্পের সব ঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুটপাট করা হয় ঘরে থাকা আসবাবপত্র ও মালামাল। এ ঘটনায় ঘরহারা হয়েছে ৬০টি পরিবার।

দিশেহারা এসব পরিবার সরকারের থেকে পাওয়া মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু কেড়ে নেওয়ার বিচার দাবি করেছেন।

স্থানীয় ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দারা জানান, মুজিববর্ষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাবনা সদর উপজেলার আলোচিত ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া এলাকার খাসজমিতে গৃহহীন ও ভূমিহীন ৬০টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জায়গা নিজেদের দাবি করে গত ৮ আগস্ট রাতে অস্ত্রের মুখে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসিন্দাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রের একটি ঘরও অক্ষত নেই। সব কটি ঘরই ভাঙচুর করা হয়। খুলে নেয়া হয় টিনের চাল, লোহার দরজা, জানালসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। অধিকাংশ ঘর একেবারেই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলোর ইটও নিয়ে গেছে অনেকে।

তবে সম্প্রতি লাগানো একটি সাইনবোর্ড দেখা যায় আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। সাইনবোর্ডে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান বলে উল্লেখ রয়েছে। এতে বাদী হিসেবে স্থানীয় আকরাম প্রাং, উম্বার প্রাং, ইব্রাহিম, আক্কাস, ইসমাইল, নবাব ও নায়েব আলী প্রামাণিকের নাম লেখা।

স্থানীয়রা বলছেন, এদের নেতৃত্বেই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ভাঙচুর করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। ঘরহারা করা হয় অর্ধশতাধিক পরিবারকে। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রিত, আবার কেউ-বা খোলা আকাশে নিচে কোনো রকমে দিন পার করছেন।

এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমাদের কিছুই ছিল না। কেউ বাঁধের জায়গায়, কেউ বাস্তুহারা হয়ে জীবনযাপন করছিলাম। এর মধ্যে আগের সরকার জায়গাসহ পাকা ঘর দিল। সুখেই বসবাস করছিলাম। অন্তত একটা ঠিকানা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটিও ছিনিয়ে নিল।’

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফাতেমা খাতুন বলেন, সেদিন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একদল লোক আচমকা হামলা করে। অকথ্য গালিগালাজ ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে আমাদের হত্যার ভয় দেখিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। এরপর ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। টিন, দরজা ও জানালা কিচ্ছু রাখেনি, সব লুটে নিয়ে গেছে। আমরা একেবারে শেষ হয়ে গেছি। এ-দ্বারে ও-দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কখনো খোলা আকাশের নিচেও রাত পার করছি।

ভুক্তভোগী ফুলমালা বেগমসহ আরো কয়েক বাসিন্দা বলেন, এক রাতে এতগুলো পরিবারকে ঘরহারা করেছে। এখন আমাদের পথে পথে ঘুরতে হচ্ছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।

দখলদার প্রভাবশালীদের সামনে তাদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই- এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ভুক্তভোগীরা বলেন, ঘটনা সবাই জানলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি তাদের। এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানায় ঘরহারা পরিবারগুলো।

এ ব্যাপারে ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই ঘর ছাড়তে তাদের হয়রানি করা হচ্ছিল। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানায় তারা। কিন্তু এখনো তেমন কিছুই নেয়া হয়নি।

ভুক্তভোগীদের অনেকে তার কাছে আসেন, তাদের মানবেতর জীবনযাপন করার কথা তুলে ধরেন জানান চেয়ারম্যান। বলেন, তারা প্রতিকারও দাবি করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন চেয়ারম্যান।

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলাম। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে করণীয় সবকিছু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন