গাছ কাটার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, দেশে দিন দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকসংখ্যক গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ব্যাপকভাবে গাছ কর্তন করা হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব করবে। পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ দেশে থাকা দরকার, সে পরিমাণ গাছ নেই এবং এই গাছগুলো রক্ষা করা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্ট গাছ কাটার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই কমিটির অনুমতি ছাড়া ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা যাবে না। তবে গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছ কাটার বিষয়টি এর আওতায় আসবে না।
‘২০৪৪ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বন বিভাগের, যশোর রোড উন্নয়ন কমিটির প্রতিবাদ’ শিরোনামে গত বছরের ২ মে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘যশোরে ২ হাজারের বেশি গাছ কাটার দরপত্র বন বিভাগের’ শিরোনামে অপর একটি দৈনিকে একই বছরের ৪ মে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে তিন আইনজীবী গত বছরের ৫ মে ওই রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৭ মে হাইকোর্ট রুল দেন। পরিবেশ রক্ষায় গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন, ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছ ব্যতীত সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা এবং ঢাকা শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল ও সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ, শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেন, যশোরে সড়কের গাছ কাটার ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে অর্থ জমা দিয়ে যাঁরা কাজ পেয়েছিলেন, তাঁদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
যেভাবে গঠিত হবে কমিটি
রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্ট ঢাকার ক্ষেত্রে গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার জন্য পরিবেশবাদী, পরিবেশবিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে সাত দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সাত দিনের মধ্যে সার্কুলার জারি করে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা সিভিল সার্জনকে নিয়ে জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি জেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানান জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।
এ ছাড়া জনপ্রশাসনসচিবকে সাত দিনের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি সার্কুলার জারি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি উপজেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ঢাকার জন্য একটি কমিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক কমিটি হবে। ২০০৪ সালের সামাজিক বনায়ন বিধিমালার অধীন রোপণ করা গাছ কাটা যাবে না; বরং গাছের সমমূল্য টাকা রোপণকারীকে দিতে হবে—এ মর্মে বিধিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়েও রায়ে নির্দেশনা এসেছে।