ম্যাচ তখন চিটাগং কিংসের দিকেই হেলে। তবু রংপুর রাইডার্সও ছিল লড়াইয়ে। চিটাগংয়ের শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হায়দার আলির উইকেট নিতে পারলে ম্যাচ জমিয়ে তুলতে পারত রংপুর। কিন্তু সেই সুযোগই দিলেন না হায়দার। পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান প্রতিপক্ষের সেরা বোলার ও স্বদেশি পেসার আকিফ জাভেদের বলে টানা চার ছক্কায় শেষ করে দিলেন। ৫ উইকেটের জয়ে প্লে-অফের একদম কাছাকাছি পৌঁছে গেল চিটাগং।
ম্যাচের আগের দিন রংপুরের কোচ মিকি আর্থার বলেছিলেন, হারানো মোমেন্টাম খুঁজছেন তারা। তার দল সেটি খুঁজে পেল না এই ম্যাচেও। টানা আট জয়ে প্লে অফে পৌঁছে যাওয়া দল এবার হেরে গেল টানা তিন ম্যাচে। চট্টগ্রাম পর্বের পর এক সপ্তাহের বিরতি দিয়ে খেলতে নামা চিটাগং কিংস ঠিকই মোমেন্টাম পেয়ে গেল দারুণ জয়ে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আজ বুধবার কার্যকর বোলিংয়ে রংপুরকে ১৪৩ রানে আটকে রেখে চিটাগং জিতে যায় ১৪ বল বাকি রেখে।
ছয় ছক্কায় ১৮ বলে ৪৮ রানের ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা হায়দার আলি।
এরআগে ম্যাচের শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায় রংপুর রাইডার্স। পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান তুলতে পারেনি তারা। উল্টো হারাতে হয় তিন উইকেট।
চট্টগ্রামের একাদশে ফেরা বিনুরা ফার্নান্দোর মেডেন ওভার দিয়ে শুরু হয় ম্যাচ। শুরুর ওভারে রান নিতে না পারা স্টিভেন টেইলর (৭ বলে ০) পরের ওভারেই বোল্ড হয়ে যান শরিফুল ইসলামের বলে।
তিনে নেমে প্রথম দুই বলেই বাউন্ডারিতে শুরু করা সাইফ হাসান এরপর আর রানই করতে পারেননি (৮ বলে ৮)।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে দৃষ্টিনন্দন এক ছক্কার পর রান আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার (১৭ বলে ২৩)। চিটাগং অধিনায়ক ও কিপার মোহাম্মদ মিঠুনের বড় কৃতিত্ব প্রাপ্য সেই রান আউটে। পাওয়ার প্লেতে রংপুরের রান ছিল ৩ উইকেটে ৩৭।
সোহানের বিস্ময়কর ইনিংস
পাওয়ার প্লে শেষে ইফতিখার আহমেদ ও নুরুল হাসান সোহান চেষ্টা করেন দলকে এগিয়ে নিতে। তবে রাহাতুল ফেরদৌসের ওভারে দুজন একটি চারে চার মারার পরও দুজনেরই পথচলা ছিল ধীরগতির। ১১ ওভার শেষে রংপুরের রান দাঁড়ায় মোটে ৬০।
সেই বৃত্ত ছেড়ে আর বেরোতে পারেননি সোহান। খালেদকে উড়িয়ে মেরে সীমানায় ধরা পড়ে আউট হন ২১ বলে ৯ রান করে।
এবারে বিপিএলে অন্তত ২০ বল খেলা ইনিংসগুলোর মধ্যে এই প্রথম কোনো ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট পঞ্চাশের নিচে (৪২.৮৫)।
খুশদিলের অনপুস্থিতি, ইফতিখারের রান ফেরা
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য পাকিস্তানের ক্যাম্পে যোগ দিতে ফিরে গেছেন রংপুরের সেরা পারফরমার খুশদিল শাহ। দল তাকিয়ে ছিল ইফতিখারের ব্যাটে। আগের তিন ম্যাচ ব্যর্থ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ভরস জোগান দলকে।
খুশদিলের বলে সুযোগ পাওয়া ইরফান শুক্কুর বিদায় নেন ১ রানেই। ৬৮ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নেন ইফতিখার ও শেখ মেহেদি হাসান।
প্রথম বলে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করলেও শেখ মেহেদি পরে উইকেট আগলে রাখার দায়িত্ব নেন। রান বাড়ানোর কাজটি করেন ইফতিখার।
সোহানের বিদায়ের সময় ইফতিখারের রান ছিল ১৬ বলে ১৬। পরে শেষ দিকের দাবি মেটান তিনি প্রত্যাশিত ব্যাটিংয়ে। খালেদের টানা দুই বলে ছক্কা মেরে ফিফটি করেন ৩৯ বলে।
শেষ ওভারেও শরিফুলকে চার ও ছক্কা মেরে শেষ করেন তিনি অপরাজিত থেকে। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৭ বলে করেন ৬৫। এবারের বিপিএলে তার প্রথম ফিফটি এটি।
৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মেহেদি অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ২২ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৪৩/৫ (টেইলর ০, সৌম্য ২৩, সাইফ ৮, হাসান , ইফতিখার ৬৫*, নুরুল ৯, ইরফান ১, শেখ মেহেদি ২২*; ফার্নান্দো ৪-১-১৫-০, শরিফুল ৪-০-৩৪-১, খালেদ ৪-০-৪৪-২, আলিস ৪-০-১৪-০, রাহাতুল ৩-০-২০-০, শামীম ১-০-১০-১)।
চিটাগং কিংস : ১৭.৪ ওভারে ১৪৮/৫ (মিলান্থা ৬, পারভেজ ৪১, ক্লার্ক ১৫, মিঠুন ২০, হায়দার ৪৮*, শামীম ৮, রাহাতুল ৬*; শেখ মেহেদি ৪-০-২৩-০, ইফতিখার ৩-০-১৪-০, আকিফ ৩.৪-০-৩৭-২, রকিবুল ২-০-২৩-০, নাহিদ ২-০-১৮-০, সাইফ উদ্দিন ২-০-২৫-২, সাইফ হাসান ১-০-৮-০)
ফল: চিটাগং কিংস ৫ উইকেটে জয়ী।