জুন নাগাদ আদানির পাওনা দাঁড়াবে ১৩০ কোটি ডলার

মত ও পথ ডেস্ক

ফাইল ছবি

ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ দায় দাঁড়াবে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার। এমনটিই প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বর্তমানে আদানি গ্রুপের বকেয়া পাওনা প্রায় ৮০ কোটি ডলার। এ বকেয়া পরিশোধে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে গ্রুপটি। সরকারও ধাপে ধাপে জুন নাগাদ অন্তত ৮২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার পরিশোধ করতে চায়। এ জন্য এ খাতের ভর্তুকি নিয়মিত ছাড় ও প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ ক্রয় বিষয়ে বিপিডিবি ও আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেডের (এপিজেএল) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মাসের বিদ্যুৎ বিল কোম্পানির ইনভয়েস দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার কারণে নিয়মিত বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অপরিশোধিত বিলের পাশাপাশি সারচার্জও বাড়ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে কিছু বিল পরিশোধ করা হলেও গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকৃত বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এর পরের তিন মাসে আরও প্রায় ২২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদ্যুৎ এসেছে। এ ছাড়া আগামী মাসগুলোতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ আসবে তার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ রপ্তানি বাবদ আদানি পাওয়ারের পাওনা দাঁড়াবে ১২৯ কোটি ১২ লাখ ডলার। তাই জুন নাগাদ অন্তত ৮২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার পরিশোধ করতে চায় সরকার। আগামীতে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ১০ কোটি ডলার এবং ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি পরিশোধের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। তারপরও জুন শেষে বকেয়া থাকবে ৪৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনা সংক্রান্ত অসম চুক্তিটি পর্যালোচনা করে তা নবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু যতদিন নতুন চুক্তি না হচ্ছে ততদিনের বিল আগের নিয়মেই পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে বিলম্ব ফির পাশাপাশি সারচার্জও বাড়তে থাকবে। তাই এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের সংস্থান নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত ১৯ জানুয়ারি আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সতর্ক করে বলেছে, তাদের ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বকেয়া বিল জুনের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে সারচার্জ পরিশোধে বাধ্য করা হবে। তবে জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে চলতি বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বিপিডিবি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মাসিক বিল পরিশোধ করলে এবং ৩০ জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া অর্থ পরিশোধ করলে সারচার্জ মওকুফ করার প্রস্তাবও দিয়েছে এপিজেএল। বিপিডিবি ও এপিজেএল উভয়ের স্বার্থে প্রস্তাবটি বিবেচনা এবং উল্লিখিত পদ্ধতিতে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো চিঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বকেয়া বিল নিষ্পত্তির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায় আদানি পাওয়ার। বিপিডিবি ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করে, যার মাধ্যমে দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করার পরিকল্পনা ছিল।

আদানি পাওয়ার আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বকেয়া অর্থ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। বিপিডিবি ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। অর্থ পরিশোধের বিষয়ে চিঠি আদান-প্রদানের মধ্যেই গত বছরের নভেম্বর থেকে কোম্পানিটি বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক সরবরাহ করছে।

শেয়ার করুন