চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে ৬২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬০৮ জনের প্রাণ গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ১০০ জন।
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৯ দশমিক ৬১ জন। দেশব্যাপী ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। নিহত ৬০৮ জনের মধ্যে নারী ৭২ জন, শিশু ৮৪ জন। এরমধ্যে ২৭১ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬৪ জন, যা মোট নিহতের ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৩ জন, অর্থাৎ ১২ শতাংশ। এই সময়ে চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত, দুইজন আহত হয়েছেন। ২২ রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৯৭১টি। এর মধ্যে বাস ১৪২, ট্রাক ১৯১, থ্রি-হুইলার ১৩৭ ও মোটরসাইকেল ২৭৯টি।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোরের দিকে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, সকালে ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ, দুপুরে ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, বিকেলে ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং রাতে ১৯ দশমিক ১৬ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ১০টি সুপারিশ করেছে – দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এসবের জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে।
এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।