বিপিএল : আবারও বরিশাল নাকি চিটাগংয়ের প্রথম শিরোপা

মত ও পথ ডেস্ক

চিটাগং কিংসের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ও ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল
বিপিএল ফাইনালের আগে ফটোসেশনে চিটাগং কিংসের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ও ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ছবি : বিসিবি

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আজ শেষ হলেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবেন বিসিবির নীতিনির্ধারকেরা! ‘অন্য রকম বিপিএল’ আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে সবচেয়ে বিতর্কিত এক বিপিএল ‘উপহার’ দিয়েছেন আয়োজকেরা। সেই টুর্নামেন্টের শেষটা সুন্দর হতে পারে জমজমাট এক ফাইনালের মধ্য দিয়ে।

ফাইনালের আগেও বিতর্কমুক্ত থাকেনি বিপিএল। প্রতি ফাইনালের আগে রীতি মেনে ট্রফি নিয়ে যে ফটোসেশনটা হয়, গতকাল সারা দিনে সেটি হয়নি। দুপুরে তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উঠতেই বিকেলে জানানো হলো ট্রফি উন্মোচন হবে সন্ধ্যায় বনানীর শেরাটন হোটেলে। আয়োজকেরা তড়িঘড়ি করে কাঠ আর ব্যানার এনে নিজেদের মতো করে ট্রফি উন্মোচনের মঞ্চ প্রস্তুত করতে থাকেন। এত বড় একটি টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত মুহূর্তেও আয়োজকদের প্রস্তুতির অভাব ও পরিকল্পনার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে এই ফটোসেশনে।

শিরোপার লড়াইয়ে এবারও তামিমের ফরচুন বরিশাল। আর তাদের চ্যালেঞ্জ জানাবে চিটাগং কিংস। তামিম ফাইনাল খেলছেন বরিশালের হয়ে, আবার দল হিসেবে চিটাগংও আছে ফাইনালে। তাহলে চট্টলার দর্শকেরা আজ কাকে সমর্থন করবেন? তামিম গতকাল সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামবাসীকে ভালো পরামর্শই দিয়েছেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষের চিটাগং কিংসকেই সমর্থন করা উচিত। তবে আমি ব্যাটিংয়ে নামলে তাঁরা আমাকে একটু চিয়ারআপ (উজ্জীবিত) করতে পারেন। চিটাগং পুরো লিগে দুর্দান্ত খেলেছে, তাদের সমর্থনই বেশি প্রাপ্য।’

বিপিএলের শুরু থেকেই বরিশালকে হট ফেবারিট হিসেবে দেখা হয়েছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা ধারাবাহিক ভালো খেলে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। আজকের ফাইনালেও বাজির দরে তামিমরাই এগিয়ে থাকবেন। তাঁদের চাইলে একটা শক্তিশালী আন্তর্জাতিক দলও বলা যায়। তামিমের নেতৃত্বে বরিশালে স্থানীয় তারকাদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তাওহীদ হৃদয়, ইবাদত হোসেন, রিশাদ হোসেনের মতো ক্রিকেটার যেমন আছেন, বিদেশিদের মধ্যে ডেভিড মালান, মোহাম্মদ নবী, কাইল মায়ার্স, জিমি নিশামের মতো তারকারাও আছেন। চিন্তা করুন, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে পর্যন্ত ডাগআউটে সময় কাটাতে হচ্ছে, ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না! টুর্নামেন্টের শীর্ষ উইকেটশিকারি, শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকায় বরিশালের কোনো খেলোয়াড় নেই। অথচ টুর্নামেন্টে দল হিসেবে তাদের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে ধারাবাহিক।

লিগ পর্বে বরিশাল যে তিনটি ম্যাচ হেরেছে, দুটিই রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। সেই রংপুর বিদায় নিয়েছে প্লে-অফেই। আরেকটি দলের কাছেও হেরেছে বরিশাল-চিটাগং কিংস, যারা আজ ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ। টুর্নামেন্ট চিটাগংয়ের পারফরম্যান্সের ওঠানামা ছিল। বরিশালের সঙ্গে তিনবার মুখোমুখি হয়ে দুবারই হেরেছে। তবে গত পরশু খুলনা টাইগার্সকে যেভাবে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে তারা, আজ শক্তিশালী বরিশালকে হারাতে মানসিকভাবে যথেষ্ট চাঙা হয়েই নামবে চিটাগং। দলে বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে খাজা নাফি, গ্রাহাম ক্লার্ক, হুসাইন তালাত, বিনুরা ফার্নান্দোর মতো প্রভাববিস্তারী বিদেশি ক্রিকেটার থাকলেও চিটাগংয়ের বেশি নজর কেড়েছে শামীম পাটোয়ারী, আলিস ইসলাম, খালেদ আহমেদ, শরীফুল ইসলামদের পারফরম্যান্সই বেশি নজর কেড়েছে।

চিটাগং কিংস মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে মাঠের বাইরের নানা বিতর্কিত ঘটনায় আলোচিত হয়েছে এবার। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ইস্যুতে তাদের স্বত্বাধিকারীর মন্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। দলটির অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন সব বিতর্ক-সমালোচনা পেছনে রেখে পাখির চোখ করেছেন শুধুই শিরোপায়। কাল আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের শুরু থেকেই অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তবে আমরা সেটা কখনোই মাথায় নিইনি। আমরা জানতাম, পারফরম্যান্সই সব কথার জবাব দিতে পারবে। আজকের ফাইনাল আমাদের কাছে সেই মঞ্চ। আমরা চাই, চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে।’

চিটাগং প্রথম শিরোপা জিতে বন্দরনগরীকে আনন্দে ভাসাবে, নাকি এবারও বরিশালের লঞ্চে উঠবে শিরোপা, এই উত্তর জানতে আজ সন্ধ্যায় দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখ থাকবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বিপিএল শুরুর আগে যেভাবে ব্যয়বহুল কনসার্টের আয়োজন করেছিল বিসিবি, শেষে অবশ্য খুব একটা আকর্ষণীয় কোনো আয়োজন নেই। তবে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ব্যাপক শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী আতশবাজির অত্যাচার এবার সইতে হবে না মিরপুরবাসীকে। তবে এবার থাকছে একটি লেজার প্রদর্শনী।

শেয়ার করুন