যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সর্বকালের রেকর্ড, বাড়তে পারে আরও

মত ও পথ ডেস্ক

ডিম
ডিম। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে ডিমের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে মার্কিন শহরগুলোতে এক ডজন গ্রেড-এ ডিমের গড় দাম ৪ দশমিক ৯৫ ডলারে পৌঁছায়, যা দুই বছর আগের ৪ দশমিক ৮২ ডলারের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। গত আগস্টে এই দাম ছিল মাত্র ২ দশমিক ০৪ ডলার।

ডিমের এমন মূল্যবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির দুই-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ডিমের দাম বৃদ্ধি।

গড় মূল্য ৪ দশমিক ৯৫ ডলার হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গায় এক ডজন ডিমের দাম ১০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে, অর্গানিক ও মুক্তভাবে পালন করা (কেজ-ফ্রি) মুরগির ডিমের দাম আরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতে এই সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই। সাধারণত ইস্টারের আগে ডিমের চাহিদা বাড়ে, যা দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগ গত মাসে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২৫ সালে ডিমের দাম আরও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার এন্সিনাল মার্কেটের মালিক জো ট্রিম্বল জানান, সরবরাহ সংকটের কারণে তার দোকানে বেশিরভাগ সময়েই ডিমের তাক মাত্র ২৫ শতাংশ পূর্ণ থাকছে।

বার্ড ফ্লুর ভয়াবহতা

মূলত বার্ড ফ্লুর কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কোনো খামারে ভাইরাস শনাক্ত হলে সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো ঝাঁকই ধ্বংস করে ফেলা হয়। অনেক খামারে লাখ লাখ মুরগি থাকায় একেকটি সংক্রমণেই ডিমের সরবরাহে বড় ধাক্কা লাগে।

দেশটিতে এবারের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে প্রায় ১৫ কোটি ৮০ লাখ পাখি মেরে ফেলা হয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, শুধু গত জানুয়ারিতেই ২ কোটি ৩০ লাখ ও ডিসেম্বরে ১ কোটি ৮০ লাখ পাখি নিধন করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল ডিম উৎপাদনকারী মুরগি।

একটি খামারে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কয়েক মাস লেগে যায়। কারণ মরা মুরগি সরানো, শেড পরিষ্কার ও নতুন মুরগি ডিম উৎপাদনে সক্ষম হতে অনেকটা সময় লাগে।

দাম বাড়ার অন্যান্য কারণ

বার্ড ফ্লুর পাশাপাশি ডিমের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি ও শ্রম ব্যয় বৃদ্ধির কারণে খামারিরা বাড়তি খরচের মুখে পড়েছেন।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি রাজ্যে কেবল খাঁচামুক্ত ডিম বিক্রির বিধান চালু হয়েছে, যার ফলে এ ধরনের ডিমের সরবরাহ কমেছে। বিশেষ করে, ক্যালিফোর্নিয়ায় সাম্প্রতিক সংক্রমণগুলো মূলত খাঁচামুক্ত খামারেই ঘটেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের চাহিদাও বেড়েছে।

কোব্যাংকের বিশ্লেষক ব্রায়ান আর্নেস্ট বলেন, চড়া দামের কারণে ডিমের চাহিদা কিছুটা কমাতে পারে, তবে তাতে বাজারে বড় পরিবর্তন আসবে না। ইস্টার ঘনিয়ে আসায় সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। ফলে বেকারি ও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনকারীদের বাড়তি খরচ সামলাতে হয়তো মূল্যবৃদ্ধি বা উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সূত্র: এপি

শেয়ার করুন