কুয়েটের ঘটনা তৈরি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব: ছাত্রদল

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সংঘর্ষ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, ঘটনাটি তৈরি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব। এর নেতৃত্ব দিয়েছে কুয়েট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে সেটি মনিটরিং করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বা আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন, ছবি ও ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে কিছু ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। সেই মিছিল থেকেই ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুকের প্রত্যক্ষ উসকানিতে কিছু মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতভাবে তেড়ে গিয়ে হামলার সূচনা করে।

ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্থা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যক্কারজনক সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কিছু স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গত ৭ই জানুয়ারি কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাধ্যমে তারা যদি ছাত্র রাজনীতি করতে পারে এবং শিবিরের কমিটিও রয়েছে, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারে, তাহলে আমার সমর্থকরা যদি ছাত্রদলের সদস্য ফরম নিয়ে থাকে, সেটি কি তারা গুরুতর অপরাধ করেছে?

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে এক এবং ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেছি, আমরা সেই ঐক্য বজায় রাখতে চাই। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী নামধারী অল্প কিছু গুপ্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না বলে যে অপপ্রচার চালায় এবং সেজন্য তারা যে গ্রাউন্ড ওয়ার্কগুলো করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, পরবর্তীতে তারা যখন ব্যর্থ হয়, তখন তারা শিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বা আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের মানুষকে জ্ঞান দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ওয়াজ-নসিয়ত করে থাকেন। আমরা জানতে চাই, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মিটিং হয়েছে, সেখানে হাসনাত আব্দুল্লাহ কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন? নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোন প্রটোকলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গিয়ে মিটিং করেছেন সেটিও আমরা জানতে চাই।

যে কোনো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদলেরও এই অধিকার আছে। সেখানে ওমর ফারুক কীভাবে ছাত্রদলের তিনজন নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে, সেই প্রশ্ন আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কাছে রাখতে চাই। গতকালের হামলার ব্যাপারে শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে।

শেয়ার করুন