ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন বলেন, প্রশাসনিক কারণে গতরাতেই বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তবে পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সুপারের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ছুটির দিনেই তাকে প্রত্যাহার করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পত্র পাওয়া মাত্র ওসির দায়িত্ব হস্তান্তর করে তাকে জেলা পুলিশ সদর দপ্তরে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়াইগ্রাম থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, ওসি স্যারকে ক্লোজ করার কথা শুনেছি। সন্ধ্যার পরে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।
জানা যায়, গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলসের’ একটি বাসে চন্দ্রা এলাকায় কয়েকজন যাত্রীকে তোলা হয়। রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রুপা ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা প্রায় ৩ ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়। সেখানে বাসচালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার গন্তব্যে না যেতে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। তবে যাত্রীদের চাপের মুখে তারা বাস ছাড়েন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি যাত্রীদের চাপের মুখে বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়। কিন্তু বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে ঘটনাস্থল যে থানার আওতায় সেখানে মামলা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু যাত্রীদের অনড় অবস্থানের কারণে বাসের তিন স্টাফকে আটক করেন। পরে তাদের ৫৪ ধারায় সনেন্দহভাজন ব্যক্তি হিসেবে আদালতে পাঠান। আদালত শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। অনেক যাত্রীই রাস্তায় নেমে গেছেন। দুজন নারী যাত্রী এসেছিলেন। তাদের একজনের বাড়ি নাটোরের লালপুরে, আরেকজনের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার দিকে। তারা তাদের নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। তারা চলে গেছেন। তাদের মুঠোফোন নম্বরও তার কাছে নেই।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিন শেলী বলেন, যেহেতু ঘটনাটি তাদের আওতার মধ্যে হয়নি এবং কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি সে কারণে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি মির্জাপুর থানাকে জানানো হয়েছে। তারা যৌথভাবে বাস ডাকাতির বিষয়টি তদন্ত করছেন। ওই থানায় ডাকাতির মামলা হবে।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। মামলায় অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।