রাওয়ালপিন্ডির পিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশের স্মৃতির বয়সটা বেশ পুরাতন। সেই ২০০৩ সালে এই মাঠে ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জুটেছিল ৫ উইকেটের হার। ২০২০ সালে টেস্টে ছিল ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা। কিন্তু ২০২৪ এর আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট এবং প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়টাও হয়েছিল এই পিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
আজকের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জিতলে ভারতের মতো তাদেরও পয়েন্ট হবে ৪। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলেও তাদের পয়েন্ট হবে ২। সেক্ষেত্রে কোনো সুযোগই থাকছে না শান্তদের সামনে। পাকিস্তানকেও তাই আজকের ম্যাচের জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। টাইগাররা জয় পেলেই যে সেমিফাইনালের ক্ষীণ আশা টিকে থাকছে তাদের।
মিচেল স্যান্টনারের সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথার ভেতরে একটি লাইন ছিল অহমের প্রকাশ। বাংলাদেশের দিক থেকে দেখলে প্রতিপক্ষকে তাচ্ছিল্য করার মতো কথা। স্যান্টনার বলেছেন, “নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে ‘আপসেট’ করতে পারে বাংলাদেশ।” কিউই অধিনায়ক পরক্ষে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, বাংলাদেশ এখনও নিয়মিত জেতার মতো দল না। স্যান্টনারের কথা ভুল না হলে পুরোপুরি সত্যিও নয়। বাংলাদেশ গত এক দশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে ভালোই খেলছে।
স্যান্টনার হয়তো ভুলে গেছেন, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাদের হারিয়েই সেমিফাইনালে উন্নীত হয়েছিল টাইগার বাহিনী। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নেপিয়ারে হারের কথাও বেমালুম ভুলে বসে আছেন কিউই অধিনায়ক। হ্যাঁ, এটা সত্য যে, নিউজিল্যান্ডের মতো জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে না পারলেও স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করেছে ঠিকই। সে ধারাবাহিকতায় রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিংস্বর্গে নিজেদের পরিকল্পনা মতো খেলতে পারলে জিতে যেতে পারেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। টাইগার কোচ ফিল সিমন্সের বিশ্বাস, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করবে তাঁর দল।
বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো টুর্নামেন্ট খেলতে গেছে কোনো প্রকার ওয়ানডে ম্যাচ না খেলে। পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটিও ভালো হয়নি। ভারতের বিপক্ষে টপঅর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা ছিল হতাশ করা। এর পরও মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী জুটি বেঁধে শোভন স্কোরে নিয়ে গেছেন দলকে। ১১৮ বলে ১০০ রান করেছেন হৃদয়। ২২৮ রানের পুঁজি নিয়েও লড়াই জমিয়েছেন বোলাররা। ভারতের কাছে হারের পর ওয়ানডেতে মেডেন সেঞ্চুরি করা হৃদয় বলেছিলেন, ৩০ রান কম করায় ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি। সে একই ভুল পাকিস্তানের মাটিতে করতে চান না তারা। রাওয়ালপিন্ডিতে বাজিমাত করতে চান অলআউট ক্রিকেট খেলে।
পাকিস্তানের এই ভেন্যুতে ২০০৩ সালে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২২ বছরের পুরোনো সে রেকর্ড বর্তমান দলের কাছে মূল্যহীন। কারণ সেই দলের কোনো ক্রিকেটার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছেন না। নাজমুল হোসেন শান্তদের কাছে টাটকা স্মৃতি আছে। এই ভেন্যুতেই গত বছর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছেন তারা। নাহিদ রানা, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদরা অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু হতেও পারে আজ এক দিনের ম্যাচে।
জিম্বাবুয়ের বাইরে বাংলাদেশ যে দলগুলোর বিপক্ষে বেশি ম্যাচ খেলেছে, তার অন্যতম নিউজিল্যান্ড। কিউইদের বিপক্ষে ৪৫টি ওয়ানডে খেলে ১১ ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। শেষ জয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২০২৩ সালে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বিবেচনায় নিলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল ২০১৭ সালে। ইংল্যান্ডের মাটিতে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি করেছিলেন জয়ের ম্যাচে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে কিউইদের দেশের মাটিতে বলে-কয়ে হারিয়েছেন সাকিবরা। পাকিস্তানে খেলা হওয়ায় কিছুটা দেশের ফিল পেতে পারে টাইগার বাহিনী। কিউইদের বিপক্ষে একাদশে এক-দুটি জায়গায় পরিবর্তন আনা হতে পারে। কন্ডিশনের কারণে ফাস্ট বোলার নাহিদ রানাকে দেখা যেতে পারে ১১ জনে। সে ক্ষেত্রে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে মুস্তাফিজুর রহমানকে। তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেন রানা। স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে লেগি রিশাদ হোসেন খেলতে পারেন। ভারতের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন রিশাদ। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে মধুর সমস্যায় আছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গা অনিশ্চিত। কারণ ভারতের বিপক্ষে ১৫৪ রানের জুটি গড়া জাকের বা তাওহিদের যে কোনো একজনকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্রাম দিতে হলে টপঅর্ডারে হাত দিতে হবে ম্যানেজমেন্টকে। সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান তামিম ওপেন করলে অধিনায়ক শান্ত খেলবেন তিন নম্বরে। চার নম্বর জায়গাটি মিরাজের জন্য। হৃদয় পাঁচে খেলেছেন গত ম্যাচে। ছয়ে মুশফিকুর রহিম, সাতে জাকের খেললে বাকি চারজন বোলার। সে ক্ষেত্রে আজও বসে থাকতে হতে পারে মাহমুদউল্লাহকে। গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সকে বেশি শুনতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহর খেলা নিয়ে। সিমন্সের উত্তর ছিল, ‘এখনও একাদশ ঠিক হয়নি। অনুশীলন শেষে মিটিং আছে। তার ইনজুরি আপডেট নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত।’
বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে গেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। গ্রুপের তিনটি ম্যাচই জিততে চেয়েছিলেন শান্তরা। ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় বাকি দুই ম্যাচ বাঁচা-মরার লড়াই। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে টাইগারদের আজ জিততেই হবে। আর হেরে গেলে নিউজিল্যান্ড উন্নীত হবে সেরা চারে। সে ক্ষেত্রে ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে টুর্নামেন্ট শেষ করতে হবে টাইগারদের।
নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, জাকের আলি অনিক, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, এবং মুস্তাফিজুর রহমান।