অত্যাধিক ব্যয়ের কারণে সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজে অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সর্বশেষ ১ মার্চ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সামরিক বাহিনীর উড়োজাহাজ ব্যবহার করেছিল ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে আপাতত আর কোনো শিডিউলড বা পূর্ব নির্ধারিত ফ্লাইট নেই। তারা আরও বলেছেন, সামরিক বিমানে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানো আপাতত স্থগিত রয়েছে এবং এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়াশিংটন।
গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব আদেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নথিবিহীন অভিবাসীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত একটি আদেশও ছিল।
ট্রাম্প এই আদেশে স্বাক্ষরের পর থেকে নথিবিহীন অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় অভিযান। বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গ্রেপ্তার করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ ছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর সি-১৭ এবং সি-১৩০ উড়োজাহাজ। এ দুই ধরনের সামরিক বিমানে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পেন্টাগনের তথ্য অনুসারে, গত ২০ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে। ভারত, গুয়েতেমালা, ইকুয়েডর, পেরু, হন্ডুরাস, পানামা ও গুয়ান্তানামোসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পরিচালিত এসব ফ্লাইটে ইতোমধ্যেই ব্যয় হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠাতে কয়েক বার ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে পেন্টাগন, প্রতিটি ফ্লাইটে খরচ হয়েছে ৩০ লাখ ডলার। এক হিসেবে দেখা গেছে, গ্রেপ্তার নথিবিহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে মাথাপিছু ব্যয় হচ্ছে অন্তত ২০ হাজার ডলার।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর পরিবহন বিভাগ ইউএস ট্রান্সপোর্টেশন কমান্ডের তথ্য অনুসারে, সি-১৭ উড়োজাহাজটিকে ভারী সামরিক সরঞ্জাম ও সেনাসদস্যদের স্থানান্তরের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। যখন এটি ফ্লাইটে থাকে, তখন প্রতি ঘণ্টায় ব্যয় হয় ২৮ হাজার ৫০০ ডলার। অন্যদিকে অভিবাসন বিষয়ক মার্কিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টসমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) যেসব উড়োজাহাজ রয়েছে, ফ্লাইটে থাকার সময় সেসব বিমানে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হয় ৮ হাজার ৫০০ ডলার।
এছাড়া আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে মেক্সিকোর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল— কোনো মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টার মেক্সিকোর আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। এ কারণে অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার আকাশসীমা ব্যবহার করতে হচ্ছে সি-১৭ এবং সি-১৩০ বিমানগুলোতে। এতে ফ্লাইটের সময় ব্যয়— দু’টোই বাড়ছে।
এছাড়া লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের বিমানবন্দরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কোনো উড়োজাহাজকে আর স্বাগত জানাবে না তারা। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সামরিক বিমানে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি