ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সমাবেশ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণ, নিপীড়ন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন একদল নারী। সমাবেশে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) অপসারণের দাবি জানান।

আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকালে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ‘নারী সহিংসতার বিরুদ্ধে নারীরা’ ব্যানারে ওই প্রতিবাদ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশজুড়ে সমাজের সব স্তরের নারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, নির্যাতন, ধর্ষণ, গণপিটুনি ও সাইবার বুলিংয়ের মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত সহিংসতা ও ভয় দেখানোর ধারাবাহিক প্যাটার্নের অংশ। দেশের নারীদের নিরাপত্তা এখন একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার শ্যামলীতে যৌনকর্মীদের ওপর হামলা, লালমাটিয়ায় দুই শিক্ষার্থীর ওপর জনসমক্ষে নির্যাতন ও হয়রানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পোশাক নিয়ে এক শিক্ষার্থীর হয়রানির ঘটনা, রংপুর ও জয়পুরহাটে মেয়েদের ফুটবল মাঠে আক্রমণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের হয়রানির বিষয় সমাবেশে উল্লেখ করা হয়।

বক্তারা বলেন, নারীদের প্রতি সহিংসতার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও প্রতিশোধমূলক হামলা, হুমকি ও সংগঠিত মব এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার, যারা গণ-আন্দোলন এবং জনগণের বিচার, স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীনতার দাবির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে– এখন পর্যন্ত তারা প্রতিশ্রুতি ও সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলার বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ তারা নেয়নি, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনেনি, বরং সরকারের নিষ্ক্রিয় মনোভাব এসব অপরাধকে আরও উসকে দিয়েছে। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা খুবই উদ্বেগজনক।

তারা বলেন, সরকারের প্রতিক্রিয়াগুলো কেবলমাত্র মুখের কথায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসানের বিবৃত্তিগুলো নারীদের আশ্বস্ত করার পরিবর্তে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। তাদের বক্তব্যে ভুল তথ্য, আইন ও বাস্তবতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি স্পষ্ট। নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর ওপর সংঘবদ্ধ হামলা, প্রকাশ্য বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও উসকানিমূলক কার্যক্রম বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

বক্তব্যে আরও বলা হয়, সাংবাদিকতার নৈতিকতার পরোয়া না করা গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন আচরণ বন্ধ করতে হবে। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আর এর প্রতিবাদ ভুলভাবে দেখানো বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে। সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে, যা আমরা কখনও মেনে নেবো না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) অপসারণ দাবি করে আরও বলা হয়, তার দায়িত্বহীন ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য জনমানুষের আস্থা নষ্ট করেছে। আমাদের দাবি, সব শ্রেণি, ধর্ম, জাতি ও পরিচয়ের নারী যেন নিরাপদে ও নির্ভয়ে তাদের অধিকার চর্চা করতে পারে।

বক্তারা বলেন, আমরা চুপ থাকবো না। আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো, যতক্ষণ না আমরা একটি নিরাপদ, স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে পারি।

সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো– নারী নির্যাতনের ‘উসকানিদাতা’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার পদ থেকে অপসারণ করতে হবে; অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই তার শাসন কাঠামোর দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে; সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নারীদের বিরুদ্ধে চলমান গণহামলা, গণপিটুনি, টার্গেটেড আক্রমণ, হয়রানি এবং ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে এবং এগুলো রোধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য প্রচার বন্ধ করতে হবে এবং জনমত গঠনে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সাইবার বুলিং বন্ধ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

শেয়ার করুন