যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ও ইউরোপীয় ঐক্যের মাধ্যমে ইউক্রেনে শান্তি অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তার।
এছাড়া সামরিক সহায়তা দেওয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলেনস্কি। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব এবং সমগ্র ইউরোপ জুড়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে (ইউক্রেনে) ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জন সম্ভব বরে সোমবার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেছেন, “ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির জন্য লড়াইয়ের সম্মুখ সারিতে শক্তিশালী অবস্থান এবং শক্তিশালী কূটনীতি একসাথে কার্যকর থাকতে হবে। আমেরিকার নেতৃত্বে এবং সমগ্র ইউরোপের সহযোগিতায়, এটি একেবারেই অর্জনযোগ্য।”
তিনি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। যার মধ্যে নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ, উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো বিষয়ও রয়েছে।
জেলেনস্কি ইউক্রেনের অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের সম্মিলিত ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন।
এদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিহিবা বলেছেন, তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সাথে ফোনে কথা বলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, “জেদ্দায় বৈঠকের আগে আমি জোর দিয়েছিলাম যে— ইউক্রেন অন্য কারও মতো যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।”
জেলেনস্কি বর্তমানে সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে অবস্থান করছেন। সেখানে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে দেখা করার কথা রয়েছে তার। মঙ্গলবার মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার কথাও রয়েছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনসমক্ষে বিবাদের পর ইউক্রেনকে সামরিক গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া এবং স্যাটেলাইট তথ্য ভাগাভাগি বন্ধের পাশাপাশি দেশটিকে সাহায্য কারও বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার আক্রমণের অবসানের জন্য কিয়েভকে আলোচনায় বাধ্য করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউক্রেন যুদ্ধই হচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত।
মূলত জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের সঙ্গে খনিজ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পরই ট্রাম্পের ক্রোধের মুখোমুখি হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মতে, ওই চুক্তিতে মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তাতে কোনও ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং পরিবর্তে ইউরোপকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য সাহায্য বাড়াতে বলেছে।
ইউরোপীয় নেতারা ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে সম্মত হয়েছেন কারণ তারা রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ইউক্রেনের ন্যাটো উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপরও ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে।
এমন অবস্থায় জেলেনস্কি গত শনিবার নিশ্চিত করেন, তিনি শিগগিরই সৌদি আরব সফর করবেন এবং সোমবার ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাতের পর ইউক্রেনের কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈঠকে বসবেন।
সৌদি আরব গত মাসে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যেও আলোচনার আয়োজন করেছিল।