বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তাদের সঙ্গে কাজ করবে চীন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) স্থানীয় একটি হোটেলে সেন্টার ফর অলটারনেটিভ আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ইমেজ অব চায়না ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু এবং অংশীদার চীন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থার যেকোনও পরিবর্তনে আমাদের নীতি একই রকম থাকে। এ দেশে যারাই সরকারে থাকুক, চীন তাদের অংশীদার হিসেবে কাজ করবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট কোনও দল বা অংশীদারকে কেন্দ্র করে নীতি গ্রহণ করি না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ ও চীনের সব জনগণের মঙ্গলের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘চীনের নীতি হচ্ছে বাংলাদেশের পছন্দকে মেনে নেওয়া এবং আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহায়তা দিচ্ছি। আমরা আশা করি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এবং সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সব ধরনের সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।’
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের মানুষ কী চায়—সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। চীনের অভূতপূর্ব উন্নয়নকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। চীন সম্পর্কে আমরা জানাতে চাই বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে ৫৮টি ফ্লাইট চলাচল করছে। ওই সব ফ্লাইটে ১১ হাজার যাত্রী যেতে সক্ষম। চীনা সরকার যাত্রীসেবা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর এবং সেন্টার ফর অলটারনেটিভের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ ‘ন্যাশনাল ইমেজ অব চায়না ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন। সেমিনারে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে সামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ও গবেষক সৈয়দ শাহনেওয়াজ মোহসিন বক্তব্য রাখেন।
রোহিঙ্গা সংকট
সেন্টার ফর অলটারনেটিভের গবেষণায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোন কোন দেশের আরও বেশি কাজ করা উচিত—প্রশ্নে ৫৮ শতাংশ বাংলাদেশি মনে করেন যে, চীনের আরও বেশি কাজ করা উচিত।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা উৎসাহ বোধ করছি— বাংলাদেশের জনগণ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের আরও বড় ভূমিকা দেখতে চায়। আমি এ কারণে আমার ঘাড়ে বেশি চাপ অনুভব করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এর মূল কারণ সম্পর্কে জানি। সেটি হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ জাতিসত্তা নীতি। এটি এখন তৈরি হয়নি। এটি ১৯৭০-এর দশকে, ১৯৯০ দশকেও হয়েছিল। এটি নতুন কোনও বিষয় নয় বলে তিনি জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যাবাসন হচ্ছে এর একমাত্র সমাধান। চীন চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ বিষয়ে আলোচনা করুক। আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র জাতিগত গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছি একটি অস্ত্রবিরতির জন্য, যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য সে দেশে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়।’