বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার জন্য হামজা দেওয়ান চৌধুরী বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। আজ (সোমবার) সকাল পৌনে এগারোটায় সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ খেলা এই ফুটবলার। গতকাল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত দু’টায় বাংলাদেশ বিমানের ম্যানচেস্টার থেকে সিলেট ফ্লাইটে রওনা হয়েছিলেন হামজা।
হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে এয়ারপোর্টে বাফুফের ৭ জন নির্বাহী সদস্য রয়েছেন। গতকাল চার সদস্যের (শাহীন, হিল্টন,গাউস ও ইকবাল) সঙ্গে আজ যোগ দিয়েছেন আরও তিন সদস্য রুপু,সবুজ ও মঞ্জু। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর হামজাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাফুফে কর্তারা। তাদের সাথে রয়েছেন হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী।
হামজাকে এক নজর দেখার জন্য সিলেট এয়ারপোর্টের বাইরে অনেক সমর্থকের ভিড়। কেউ ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, কেউ আবার খালি হাতে শুধু এক নজর দেখার জন্য। হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন এ জন্য গণমাধ্যমকর্মীরাও বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছেন।
হামজা আগেও বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এবারের আসাটা বিশেষ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলোয়াড় হয়ে দেশে আসছেন তিনি। স্মরণীয় এ সফরে তার সঙ্গী মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে হামজাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাকে এসকট করে নগরী পার করে দেওয়া হবে। একইভাবে জেলা পুলিশও সড়কে তার নিরাপত্তা দেবে।
হামজার আগমন ঘিরে নিজ গ্রাম স্নানঘাটসহ পুরো জেলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী জানান, সাজসাজ রব পড়েছে হামজার নিজ গ্রামে। তাকে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নিজ এলাকার কৃতী সন্তানকে বরণ করতে প্রস্তুত গ্রামবাসী।
শান্ত ও নম্র স্বভাবের হামজা খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন ছড়িয়েছেন খ্যাতি, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। তাই তো হামজাও দিচ্ছেন তাদের আস্থার প্রতিদান। গ্রামের বাড়ি স্নানঘাটে গড়ে তুলেছেন একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা। যেখানে পড়াশোনা করছে এতিম শিশুরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর পর দেশে আসছেন হামজা চৌধুরী।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ভাত-গরুর মাংস তাঁর প্রিয় খাবার। দেশি সবজিও তার পছন্দের। হামজার খাবারের তালিকায় বেশ কয়েক ধরনের মাংস পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানান তারা। আর রাতে ঘুমাবেন পৈতৃক ঘরে। এ বিষয়ে সফর আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সন্তান দেশের জার্সি গায়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের। তার আগমন ঘিরে আমরা উচ্ছ্বসিত, বিশেষ করে তরুণরা তাকে একনজর দেখার জন্য বিশেষ আগ্রহে বসে আছেন। হামজা যখন ছোট সময়ে বাড়িতে আসতেন, তখন আমিও তাঁর সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর টান ছিল।’ শুধু হামজা নন, তার মতো আরও প্রবাসী ফুটবলারের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখতে চান হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী।
আগামীকাল ঢাকায় আসতে পারেন হামজা। এরপর যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হবে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এই মিডফিল্ডারের। ২০ মার্চ বাংলাদেশ দল রওনা দেবে শিলংয়ের পথে, আর এর আগে ১৮ মার্চ কোচ কাবরেরা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করবেন অধিনায়ক ও হামজাকে।