পল্লবীতে রাতে আটকে নারী সাংবাদিককে ‘দলবদ্ধ ধর্ষণ’, দুজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই রাজধানীর পল্লবীতে সোমবার রাতে আটকে রেখে এক নারী সাংবাদিককে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই নারী সাংবাদিক মঙ্গলবার সকালে ৯৯৯–এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ঘটনা তুলে ধরে তিনি পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ওই সাংবাদিককে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন বলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে পল্লবী থানার বারনটেকের ‘গ্রিন সিটি’ এলাকায়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ধর্ষণের শিকার ওই নারী একটি পত্রিকায় কাজ করেন। মাটিকাটা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে ওই নারী রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গতকাল রাত ১১টার দিকে সেখানে যান। তখন কয়েকজন যুবক তাঁকে ধরে বারনটেকের গ্রিন সিটি এলাকার একটি নির্মাণাধীন ১২ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। এরপর ১৬ ব্যক্তি তাঁকে ঘেরাও করে ফেলেন। দিবাগত রাত একটা থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ওই নারীকে ধর্ষণ করেন তাঁরা।

চলিশোর্ধ্ব ওই নারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ধর্ষকেরা চলে যাওয়ার পর ওই নারী ৯৯৯–এ ফোন করেন। তখন ক্যান্টনমেন্ট থানা–পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল পল্লবী থানা এলাকা হওয়ায় তাঁরা ওই সাংবাদিককে এই থানায় নিয়ে আসেন। ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে ওই নারী একটি মামলা করেছেন। সেখানে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয় আসামি হিসেবে আছে আরও আটজন।

এরপর দুপুরে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি এনামুল হক (৩৮) ও তাঁর এক সহযোগী হামিদুর রহমানকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ওসি নজরুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই দুজন ওই সাংবাদিককে দলবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। বুধবার তাঁদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. মাকছুদের রহমান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে এনামুলের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের চরগোবিন্দ এলাকায়। আর হামিদুরের বাড়ি গাজীপুরের পুবাইলের মেঘডুবিতে। তাঁরা দুজনই বর্তমানে ঢাকায় থাকেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর প্রাণ হারায় আট বছরের এক শিশু। এসব ঘটনা মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ধর্ষণের প্রতিবাদ ও নারী নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে গত সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।

শেয়ার করুন