সিলেটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ইফতার আয়োজনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একটি অংশের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একটি পক্ষ ইফতার না করে আয়োজন স্থল থেকে বাইরে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। ইফতারের পরে তারা আবারও মারামারিতে জড়িয়েছেন।
নগরীর বালুচর এলাকার আমানউল্ল্যাহ কনভেনশন সেন্টারে এ ঘটনায় সময় ছবি ও ভিডিও তুলতে গেলে মারমুখী নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন সংবাদকর্মীরা; কারও কারও ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
মারামারিতে লিডিং ইউনিভার্সিটির শান্ত নামে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর মিলেছে।
সিলেটের নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতারের এ আয়োজনে নবগঠিত এনসিপির আহ্বায়ক নাসিরুউদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসমিন জারা, কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক নুরুল হুদা জুনেদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
মারামারির বিষয়ে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ইফতারের ঠিক ৭ থেকে ৮ মিনিট আগে মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসমিন জারা। এসময় মঞ্চের সামনে আসন নিয়ে বিরোধ ও বক্তৃতা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করতে শুরু করলেও সাংবাদিদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে তারা উল্টো তেড়ে আসেন। পরে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে তারা সরে যান।
এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক নুরুল হুদা জুনেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন বলেন, ‘যারা এই আচরণ দেখাচ্ছে, তারা কুক্ষিগত করতে চাচ্ছে। তারা ক্ষমতাকে অপব্যবহার করতে চায়, বক্তৃতা দিতে চায়। এনসিপির নামে তারা চাঁদাবাজি করতে চায়।
‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম করে উশৃঙ্খল মানুষ হট্টগোল করার চেষ্টা করে। মেহমান সাংবাদিকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে। এটার দায় এড়াতে পারি না। জুলাই বিপ্লবকে পুঁজি করে যারা শক্তি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজি অন্যায় সুযোগ নিতে চায়, তাদের কোনো স্থান এনসিপিতে হবে না।”
এসময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল।
মারামারির ঘটনার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক সিলেটে বৈষম্যেবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপ থাকার কথা তুলে ধরে অভিযোগ করেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি অংশের ২৫ থেকে ৩০ জন ইফতারে এসে হট্টগোল ও হাতাহাতি করে বেরিয়ে যায়। ইফতারের পরেও তারা হাতাহাতিতে জড়ায়।
তিনি বলেন, ইফতারের সময় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও পরে আবারও হট্টগোল হওয়ার কথা বলেন তিনি।
ইফতার অনুষ্ঠানে হট্টগোল শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুউদ্দীন পাটওয়ারী।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন ‘আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়ার বিষয়ে সেনানিবাস থেকে সমঝোতা করতে বলার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ নিয়ে চাপ এসেছে কি না’? এর উত্তরে নাসিরুদ্দীন বলেন, ‘‘হাসনাত আব্দুল্লাহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে মিটিং করছেন। তার বক্তব্য সোশাল মিডিয়ায় আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটা শিষ্টাচার বহি:র্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ফাংসনারি যা যা আছে ও আমরা দেখছি, সেনানিবাসের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক জায়গায় হস্তক্ষেপ করছেন। এই ধরনের হস্তক্ষেপ আমাদের কাছে কাম্য নয়।’’
তিনি আওয়ামী লীগ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফেরানো কাজ যে করবে তাদের শক্ত হাতে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলের আন্দোলন চলমান থাকবে বলেও জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেইসবুক পোস্টে সেনানিবাস থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে ‘চাপ দেওয়ার’ অভিযোগ তোলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।
তার এ বক্তব্য রাতে সংবাদমাধ্যমে আসে। এরপর অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হাসনাত রাত ২টার দিকে ওই ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় তিনিসহ তিনজনের কাছে সেনানিবাস থেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে’ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে ‘৪০ বছরের বেশি সময়’ সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ ও বচসা হওয়ার কথা তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই তাদের চলে আসতে হয়েছে।